বিশেষ প্রতিনিধি:
‘যতই ক্ষমতাধর ও বর্ষীয়ান হোন না কেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চাইলে, গ্রুপিং সৃষ্টি করতে চাইলে মানব না। এখন তো মুখ খুলতে শুরু করেছি, আগামী দিনে আচরণে পরিবর্তন না আনলে প্রত্যেকটা এলাকায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করব।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে ফিজারের উদ্দেশে এসব কথা বলেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। ফলে দিনাজপুরের রাজনীতিতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন ফিজার এবং শিবলী সাদিক। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে বলেও জানা গেছে।
বেশ কিছুদিন ধরে শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করে আসছে নবাবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি আদিবাসী পরিবার। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মপক্ষ সমর্থনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শিবলী সাদিক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির প্ররোচনায় একটা পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২৯ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন শিবলী সাদিক। তিনি দাবি করেন, এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা আছে, গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনা করেন তিনি, সভাপতির চাহিদা অনুযায়ী পকেট কমিটি ঘোষণা করেন না—এসব কারণে মোস্তাফিজুর রহমানের গাত্রদাহ হয়েছে। এ জন্য তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ এনে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করানো হচ্ছে দাবি করে শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমাদের একটা পার্ক আছে। বলা হচ্ছে, সেখানে ২০০ একরের মতো জমি আছে। সেখানে বর্তমানে জমির মূল্য ৫-৭ লাখ টাকা বিঘা। হিসাব অনুযায়ী, ২০০ বিঘা জমির দাম আসে ১০-১৫ কোটি টাকা। আমার পরিবার আফতাবগঞ্জ এলাকায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ করছে। আমাদের জমিতে হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, কবরস্থান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কারও জমি দখল করার প্রশ্নই আসে না। পরিবার থেকে এসব শিক্ষা পাইনি।’
ফেসবুক লাইভে অভিযোগকারীদের উদ্দেশে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘মধ্যপাড়া রেঞ্জের যে ভূমি দখল হয়েছে, সে তালিকা ভালো করে দেখেছি। সেখানে আমার পরিবারের কারও নাম নেই। আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন স্বপ্নপুরীর শুরু হয়। স্বপ্নপুরী এখন পর্যন্ত একক মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। কোনো লিমিটেড কোম্পানি নয়। সেটার স্বত্বাধিকারী আছেন, তাঁর নামে অভিযোগ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যদি ভূমিদস্যু হয়ে থাকি, আমার নামে মামলা করা হোক। আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
মোস্তাফিজুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সব সময়ের জন্য গ্রুপিং সৃষ্টি করেন বলে মন্তব্য করেন শিবলী সাদিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার মতো অভিজ্ঞ নই। আমাদের ভুলত্রুটি শুধরে দিতে পারতেন। তা না করে আপনি পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন। দিনাজপুরের প্রতিটি আসনে সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছেন। আমার বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে বাবাকে হারিয়েছেন। একইভাবে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাঁদের হারিয়েছেন। আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে আচরণ পরিবর্তনের আহ্বান জানাই।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিবলী সাদিক আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নন। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।