আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরো: রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার একযুগ পর ‘সিটি বাস সার্ভিস’ চালু হতে যাচ্ছে। অক্টোবরে মাসেই এই সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানান মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। এ জন্য প্রাথমিকভাবে তিনটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। যানজট নিরসন, অবৈধ ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক সুবিধা বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাস সার্ভিস চালু হলে নগরে জনভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার এত বছরে নাগরিক জীবনে লাগেনি পরিবর্তনের ছোঁয়া। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা একমাত্র বাহন হওয়ায় নগরে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে তীব্র যানজট। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনেক দিন থেকেই সিটি বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বর্তমান মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। এর পরই এ উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেশের ১০ম সিটি করপোরেশন হিসেবে রংপুরের পথচলা শুরু। এখন রসিকের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সিটি করপোরেশন ছাড়াও গত ১২ বছরে রংপুর জেলা থেকে বিভাগ, বিভাগ থেকে মেট্রোপলিটন এলাকা হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। ফলে নগরকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মডার্ন মোড় থেকে সিও বাজার, তাজাহাট থেকে নজিরের হাট ও মাহিগঞ্জ থেকে হাজির হাট পর্যন্ত তিনটি রুটে চলবে নগর পরিবহনের বাস। যানজট নিরসন ও নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এই সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। করপোরেশনের লাইসেন্স শাখা বলছে, নগরীতে লাইসেন্স পাওয়া ইজিবাইকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩০৬টি। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। এছাড়া প্রায় ৪০ হাজার লাইসেন্সহীন মোটরচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করে। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা একমাত্র বাহন হওয়ায় নগরে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। এ ছাড়া নগরীর ভেতর চলাচলের একটি মাত্র অপ্রশস্ত সড়ক। তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে হাজার হাজার ধীর ও দ্রুতগতির যানবাহন। নগরীর দমদমা এলাকার তৈয়বুর রহমান বলেন, এখন শহরে মোটরচালিত ইজিবাইক আর রিকশার কারণে চলাচল কষ্টকর হয়েছে। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ ৩০ মিনিটেও পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে সিটি বাস চালু করলে নগরের মানুষের সময় ও খরচ কমবে। নগরীর মডার্ন মোড় এলাকার ফরহাদ হোসেন বলেন, নাগরিক সমাজ অনেক দিন ধরে সিটি বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবি পূরণ হওয়ায় নগরবাসী আনন্দিত। নগরে সিটি সার্ভিস থাকা জরুরি বলে মনে করেন মানব কল্যাণ ঘর সামাজিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক জেবা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘বাস চালুর আগে নগরে রিকশা, ইজিবাইকের যে জট আছে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করে সিটি বাস সার্ভিস চালু হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুরের সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালে এ রকম দ্বিতল দুটি বাস সিটি সার্ভিসের জন্য উদ্বোধন করা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে সেই সেবা চালুই করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ৪ বছর পর আবার চালুর উদ্যোগ এটি নিঃসন্দেহে নগরবাসীর জন্য ভালো। তবে, আগের মতোই যেন এই সেবা উদ্বোধন আর পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইকের লাগাম টানাসহ সঠিক পরিকল্পনা সিটি বাস সার্ভিস বাস্তবায়ন করতে হবে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে মডার্ন মোড় থেকে সিও বাজার, তাজাহাট থেকে নজিরের হাট ও মাহিগঞ্জ থেকে হাজির হাট পর্যন্ত তিনটি রুটে চলবে নগর পরিবহণের সিটি বাস সার্ভিস। যানজট নিরসন ও নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এই সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সওজ, এলজিইডি, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যেই এই সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে মানুষ নির্বিঘ্নে কম খরচে অল্প সময়ে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে।