আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে রুশ সেনারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনিস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার এমন খবর দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে নিজেদের মতামত জানায়। মঙ্গলবার রাশিয়ার বর্তমান আক্রমণের ধরন পর্যালোচনা করে তারা দাবি করেছে, আগামী ২৪ থেকে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী কিয়েভ দখলের উদ্দেশে মিশন শুরু করবে রাশিয়া।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার প্রধান ও আসল লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল করা, প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও নিজেদের আজ্ঞাবহ সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
কিয়েভে রাশিয়ার হামলা করার পরিকল্পনার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনারা এখন কিয়েভের পূর্বে, উত্তর-পশ্চিম দিকে, পশ্চিম দিকে নজর দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য আগামী ২৪-৯৬ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে অভিযান চালানো।
রাশিয়ানরা কিয়েভের দিকে অগ্রসর হওয়া তাদের সামরিক বহরকে থামিয়ে রেখেছে। কারণ খাবার ও জ্বালানি সংকটে পড়েছিল তারা। কিন্তু বর্তমানে আবার নতুন করে রশদ যোগাড় করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
তাছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র, ও গোলা-বারুদ হামলা অব্যহত রেখেছে। তারা রাজধানীর কাছে তাদের হামলার তীব্রতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে যেন ইউক্রেন দুর্বল হয়ে যায়। রাজধানী কিয়েভের পশ্চিম দিকের শহর ইরপিন থেকে বেসামরিক মানুষজন বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে।
ইনিস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার আরও জানিয়েছে, যদি রুশ সেনারা নতুন করে রশদ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, আর অন্যদিক দিয়ে সেনাদের অন্যদলগুলো যেভাবে এগিয়ে আসছে; যদি তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে পারে তাহলে কিয়েভ দখলের মিশনে রুশ সেনাদের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।
ওদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদমির জেলেনস্কি নতুন করে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের সমালোচনা করেছেন। তিনি কয়েকদিন ধরে পশ্চিমাদের কাছে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। জেলেনস্কি এমনটিও বলেছেন, যদি তারা নো ফ্লাই জোন ঘোষণা না করতে পারেন তাহলে যেন তাকে বিমান দিয়ে সহায়তা করেন।
জেলেনস্কির এমন আবেদনের পর পশ্চিমারা তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সহায়তা না আসায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার টেলিগ্রামে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বেশ রাগান্বিত সুরে জেলেনস্কি বলেন, ১৩ দিন হলো আমরা প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আসছি। ১৩দিন হলো আমাদের শুধু বলা হচ্ছে, আকাশে আমাদের সহায়তা করা হবে, বিমান থাকবে, বিমান আমাদের কাছে পাঠানো হবে। নো ফ্লাই জোন ও বিমান দিয়ে সহায়তা না করায় যে সকল ইউক্রেনীয় মারা যাচ্ছেন এর জন্য পশ্চিমারাও দায়ী থাকবে। যারা ১৩ দিন ধরে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তাদের ওপরও দায় (ক্ষয়ক্ষতির দায়) আছে। যারা রাশিয়ার হত্যাকারীদের কাছে ইউক্রেনের আকাশকে নিরাপদ করতে পারেনি তারাও দায়ী।
ওদিকে, ইউক্রেনে যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে সেদেশ ছেড়ে পালানো লোকের সংখ্যা এখন দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত ১,২০৭ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।