হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব আসন্ন দুর্গা পূজা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে সম্পন্ন করতে ডিএমপির সকল পুলিশ ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের পুজামন্ডপে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেই জন্য আমাদের সকলকে পূজা চলাকালীন সময়ে পরিশ্রম করতে হবে।
আজ বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকালে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আগস্ট ২০২২ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় কমিশনার এসব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, এ বছর পুজা মণ্ডপে আনসার সদস্য স্থায়ী ভাবে থাকবে। পুলিশকেও পূজা চলাকালীন সময়ে পুজা মণ্ডপে অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচী শান্তিপূর্নভাবে পালন করলে পুলিশ বাধা দিবে না, তবে রাজনীতির নামে যারা আগুন সন্ত্রাস করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সংঘাত বাড়ানোর জন্য কিছু মানুষ কাজ করে তাদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। এসব মিছিল মিটিংয়ে যাতে কোন ধরণের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেন তিনি।
গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, মামলা তদন্ত, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও মূলতবি মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও ইভটিজিং প্রতিরোধে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারে কাজ করার কথা বলেন তিনি।
মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভার শুরুতেই গত আগস্ট মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র বা অপরাধ বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা তথা অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
সভায় ঢাকা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসারদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
আগস্ট মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে তেজগাঁও বিভাগ ও মিরপুর বিভাগ। তবে ওয়ারেন্ট তামিল করে শ্রেষ্ঠ হয়েছে উত্তরা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মুজিব আহম্মেদ পাটওয়ারী। পুলিশ পরিদর্শক তদন্তদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মুগদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কামরুল হোসাইন। পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশনস্) মধ্যে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস্) মোঃ তোফাজ্জল হোসেন।
শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হয়েছেন যৌথভাবে চকবাজার মডেল থানার এসআই নুর উদ্দিন-১ ও পল্লবী থানার এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম। বিস্ফোরক উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই নুর উদ্দিন-১। মাদক উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্টন থানার এসআই সুজন কুমার তালুকদার এবং চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন লালবাগ থানার থানার এসআই জ্যোতিময় মল্লিক।
৯টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবাশীষ কর্মকার। অস্ত্র উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হয়েছেন গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহিদুর রহমান, পিপিএম। মাদকদ্র্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু, বিপিএম। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হয়েছেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। অজ্ঞান/মলম পার্টি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হলেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু আশরাফ সিদ্দিকী।
৮টি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক লালবাগ বিভাগ। শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়েছেন ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হয়েছেন ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট হয়েছেন ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মোঃ আব্দুল কাদের।
এছাড়াও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগসহ ১০ টি বিভাগ ও বিভিন্ন পদ মর্যাদার ১২০ জন অফিসার এবং ফোর্সকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
প্রতি মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের কর্মোদ্দীপনা বাড়াতে প্রতিমাসের কার্যক্রম পয়েন্ট আকারে যোগ করে পরবর্তী মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুরস্কৃত করে থাকেন ডিএমপি কমিশনার।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার এর সঞ্চালনায় অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান, বিপিএম(বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম(বার); যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।