বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজকে সময় এসেছে বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করার; আজকে সময় এসেছে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ আমরা নিয়োজিত ছিলাম স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে দেশকে গড়ে তোলার।
রোববার নড়াইল জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর জেলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তারেক রহমান বলেন, আজকের এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা যেভাবে দলকে পুনর্গঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছি; একইভাবে দেশকেও পুনর্গঠন করতে হবে। এই রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রকাঠামোকে আমাদের মেরামত করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ অতীতে দেখেছে কমবেশি যতটুকু সম্ভব হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে। হতে পারে আমরা যতটুকু করতে চেয়েছিলাম, বিভিন্ন কারণে হয়তো ততটুকু করতে পারিনি; কিন্তু তারপরও করার মধ্যে যতটুকু করেছে আপনাদের প্রিয় দল বিএনপিই করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে; যাতে আগামী দিনের প্রজন্ম শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে। দেশের অর্থনীতিকে আবার গড়ে তুলতে হবে। কৃষি ও কৃষকের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। দেশের শিল্প ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমাদের পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে আমরা স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারি।
জেলা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন আজকের এ সম্মেলনে আমরা দুটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করি। কেন প্রতিজ্ঞা করব? আপনারা হচ্ছেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৈনিক। আপনারা হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সৈনিক। আপনারা সেই দুজন মানুষের সৈনিক, যে দুজন মানুষের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে, আপনাদের দলের দিকে তাকিয়ে আছে যে, এই দলটি অতীতের মতো বাংলাদেশের মানুষকে দিশা দেখাবে, এ দলটি অতীতের মতো বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। আমরা যেমন দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, দলকে নতুনভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি; একই সঙ্গে আসুন, তৃতীয় আরেকটি প্রতিজ্ঞা করি- যে কোনো মূল্যে মানুষের আস্থা অর্জন করব এবং ৩১ দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করব। প্রায় আড়াই বছর আগে দেশের মানুষের সামনে আমরা ৩১ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। এই ৩১ দফা হচ্ছে বিগত ১৫ বছর পালিয়ে যাওয়া খুনি স্বৈরাচার সরকার যে দেশকে ধ্বংস করেছে, সেখান থেকে কিভাবে দেশকে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব তার পরিকল্পনা।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কাজ একটি, লক্ষ্য একটি, কথা একটি- দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটিই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা ও শপথ।
রোববার বেলা ১১টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন- বিএনপির খুলনা বিভাগীয় (ভারপ্রাপ্ত) সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জুলফিকার আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলি হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী প্রমুখ।
দুপুর আড়াইটার পর শুরু হয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সহ-সভাপতি জুলফিকার আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী ও কামরুল ইসলাম। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।