বঙ্গবন্ধু ভবন পুড়িয়ে দেয়ায় দেশবাসীর কাছে এর বিচার চেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে আবেদন জানিয়ে যথাযথ মর্যাদার সাথে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট পালন করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে অনুরোধ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানা গেছে। জয় জানিয়েছেন, এটি তার মায়ের স্টেটমেন্ট (বক্তব্য)।
এতে বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একইসাথে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, আমার তিন ভাই– শেখ কামাল, শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল এবং আমার ছোট ভাই (১০) শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও আমার একমাত্র চাচা শেখ নাসের, ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন ও পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
আরও হত্যা করা হয়, শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সারনিয়াবাদ, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ, ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহীদ সারনিয়াবাদ ও ভাগ্নে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে।
১৫ই আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত এবং শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা তার এই বিবৃতিতে বলেন, গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরেছে। যার মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, এমনকি অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিকসেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। স্বজনহারার বেদনা নিয়ে আমার মত যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।
এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে আপনাদের সেবা করেছি তার শুভ ফল আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে।