আবারও নদীর তালিকা প্রকাশ করেছে নদী রক্ষা কমিশন। এতে নতুন করে নদীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০১টি। সে হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে এখন নদী রয়েছে ১ হাজার ৮টি। এসব নদীপথ ২২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ।
রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নদীবিষয়ক এক সেমিনারে এ নদীর তালিকা প্রকাশ করে নদী রক্ষা কমিশন।
এর আগে গত ১০ আগস্ট দেশের সব নদ-নদীর একটি তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। সেখানে নদ-নদীর সংখ্যা দেখানো হয় ৯০৭টি। তবে এ তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। তাতে দেখা গেছে, নদীর সংখ্যা, দৈর্ঘ-প্রস্থ নিয়ে বেশ অসামঞ্জস্য রয়েছে। এ ছাড়া নদীর উৎপত্তি স্থল নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। আবার কোথাও কোথাও একই স্থান বা উপজেলার নামে একাধিকবার লেখা হয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক হাইড্রোলজিস্ট মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার।
তিনি দেশের নদ-নদীর সংখ্যা ও সংজ্ঞা নির্ধারণ করার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে বলেন, সারাদেশে জেলা, উপজেলা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা দেশের নদীর সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। দেশে এখন ১ হাজার ৮টি নদী আছে। যার দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জেলার ওপর দিয়ে ২০টি নদী প্রবাহিত হয়। আর সর্বোচ্চ ৯৭টি নদী সুনামগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদীর সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের নদী পদ্মা ও ইছামতি। ইছামতি নদীই আছে ১১টি। বিভিন্ন জায়গায় এ নামে পরিচিত। ২৮০ কিলোমিটারের ওপরে আছে পাঁচটি নদী। ২০০ থেকে ২৭৯ কিলোমিটার র্দৈঘর নয়টি নদী আছে। ১০০ থেকে ১৯৯ কিলোমিটারের মধ্যে আছে ৪২টি নদী। পাঁচটি নদী আছে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। ১০ থেকে ৯৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আছে ৪৮০টি নদী। ১ থেকে ৯ কিলোমিটার র্দৈর্ঘ্যের আছে ৩৭৬টি নদী। ১ কিলোমিটারের কম ৪১টি। আর দৈর্ঘ্য সম্পর্কে তথ্য নেই ৫৫টি নদীর। দেশের দীর্ঘতম নদী পদ্মা, যার দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষা কমিশন নিঃসঙ্গ শেরপার মতো কাজ করছে। আমাদের পাশে কেউ নেই। আমাদের যেসব দক্ষ অফিসার যারা ছিলেন, তাদের তাৎক্ষণিক (স্ট্যান্ড রিলিজ) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ নদ-নদী রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিল।
আদালতের নির্দেশনায় ঢাকার আশপাশের শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ এবং বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আমরা দখলমুক্ত করতে পারলেও দূষণমুক্ত করতে পারিনি। অন্যদিকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ দেশের অন্য নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পারিনি।
চাঁদপুরের এক মন্ত্রী মেঘনা নদী দখলে সহায়তা করেন উল্লেখ করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় সরকারি কর্মকর্তাদের ওই মন্ত্রী শাস্তি দিয়েছেন। আবার সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। এই হায়েনার দল থেকে নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। এই হায়েনার দলের পেছনে আছে রাজনৈতিক শক্তি।
কর্ণফুলীর অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইকোনমিক জোন অথিরিটি (বেজা) নদী দখল করে ইকোনমিক জোন গড়ে তুলেছে। তারা এখন বিভিন্ন কোম্পানিকে লিজ দিয়েছে। কর্নফুলী নদী শুধু পরিবেশগতভাবে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদীর কাগজপত্র দিলেও মন্ত্রণালয় বলছে এটা নদীর অংশ না।
তিনি বলেন, কর্ণফুলীকে লিজের নামে টুকরা টুকরো করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। সচেতন মহল, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সবাই মিলে এই কাজ করছে। এই দখলের পক্ষে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও এনজিওকর্মী তারা শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে।