সেতুর অভাবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে চলাচল করছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বাচামারা, চরকাটারী ও জিয়নপুর ইউনিয়নের লাখো মানুষ। উপজেলার আমতুলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর শাখা পারাপারে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে নৌকা একমাত্র ভরসা ৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের।
আজ সোমবার সরেজমিনে আমতুলী নদীর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ নদীতে খেয়া পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছেন। অপরপ্রান্তে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ছোট নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
আমতুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবর রহমান বলেন, যোগাযোগের সমস্যার কারণে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অনেক সময় নদীতে স্রোত থাকে তখন বাচ্চারা স্কুলে আসতে চায় না। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় করে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ, চরকাটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আয়ুব আলী মন্ডল, জিয়নপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, আমতুলী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণে দাবি দীর্ঘদিনের। জনদুর্ভোগ এড়াতে আমতুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এখানে একটি সেতু নির্মিত হলে ৩টি ইউনিয়নের এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে। সেই সাথে দুই পাড়ের সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন, কৃষি ,ব্যবসা বৃদ্ধিসহ এলাকাবাসীর সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে।
আমতুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. জনি হোসেন, মো: রনি মিয়া, ৬ষ্ঠ শ্রেণির মো. আবু তালহা বলেন, ছোটবেলা থেকে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছি। প্রায় নৌকার জন্য দাড়িয়ে থাকতে হয়। বর্ষাকালে নৌকায় পারাপারের সময় ভয় লাগে।
নৌকার মাঝি লাউতারা গ্রামের আয়নাল সেক বলেন, ১৫/২০ বছর ধরে আমি এ নদীতে খেয়া নৌকা চালাই। ৮৮ সাল থেকে এ ঘাটে খেয়া পারাপার হয়। নৌকা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ হাজার লোক পারাপার হয়। আমি চাই, এখানে একটা সেতু হোক। আমি নৌকা না চালাতে পারলেও দুঃখ নেই। তবে সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. ইরাজ উদ্দিন দেওয়ান জানান, যমুনা শাখা আমতুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাঠানোর পর মাটি পরীক্ষা-নিরিক্ষার কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা শাখা নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আমতুলী গরু হাট বাজার, আমতুলী কে.এস উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, আমতুলী কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস। নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে বাচামারা বি.বি.সি ডিগ্রী কলেজ, বাচামারা উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাটবাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা। এসব অফিসে সেবা নেওয়ার জন্য যাতায়াতের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। সেতু হলে আমাদের যাতায়াত সুবিধা যেমন হবে তেমনি ঝুঁকিও কমবে, সময়ও বাঁচবে।