হুমায়ুন কবির, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : শবে বরাতের দুই সপ্তাহ বাকি। এরইমধ্যে কুষ্টিয়ার খোকসায় সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে রোজা আসতে এখনো এক মাস বাকি। শবে বরাত ও রমজানকে ঘিরে বাজারে লেগেছে আগুন। উপজেলার কাঁচাবাজারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচামরিচসহ সব ধরনের শাকসবজির দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০-৪৫ টাকার কাঁচামরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। অর্থাৎ, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা। অপরদিকে, বেড়েছে অন্যান্য সবজির দামও।
শনিবার (৫ মার্চ) উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায় গত সপ্তাহে যা ছিল ১৩ টাকা, দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা কেজি বর্তমানে তা ৫০ টাকা, দেশী আদা ৭৫ টাকা কেজি গত সপ্তাহে যার ছিল ৬৫ টাকা, দেশী রসুন ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা।
সবজির দোকানগুলোতে যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, কাঁচা পেঁপে, লাল শাক, বেগুণ, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, করলা, কচুর লতি, ঢেঁড়স অন্যান্য সবজির। তবে দামের ক্ষেত্রে কোনো সবজিই গত সপ্তাহের বাজারদরে নেই। গত সপ্তাহের দামের তুলনায় এসব সবজি দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা টাকা।
এছাড়া বেড়েছে মুদি পণ্য ও মসলার দামও, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে গত সপ্তাহে দাম ছিল ৭৫ টাকা। সোয়াবিন তেল ১৮০ টাকা লিটার গত সপ্তাহে যা ছিল ১৬৫-১৬০ টাকা লিটার।
মুগ ডাল ১৩০ টাকা গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০, বুটের ডাল ৭৫ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১২০ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা গত সপ্তাহের মূল্য ছিল ৭০ টাকা কেজি। জিরা কেজি ৪২০ টাকা, বড় এলাচ কেজি ২৫০০ টাকা, ছোট এলাচ ১৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১০০০ টাকা, কিসমিস ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিনিকেট চাল ৬৫ কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৬৩ টাকা,
কাজল লতা চাল ৫৮ কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৫৪ টাকা ৫৮, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৫ কেজি গত সপ্তাহে ছিল বর্তমানে ৪৮ টাকা কেজি। খোলা আটা ৩৩ টাকা কেজি গত সপ্তাহে যা ছিল ৩০ টাকা। প্যাকেট আটা ৪০ টাকা কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৩৮ টাকা।
উপজেলার বিলজানি, সমষপুর, জানিপুরসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, মুরগির, গরু ও ছাগলের মাংসের দাম আরেক দফা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা গত সপ্তাহে যাওয়া ছিল ১৩৫, সোনালি ২৭০ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ এবং দেশি মুরগি ৪০০-৪১০ টাকা কেজি দাম বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এছাড়া গরুর মাংস ৬২০ টাকা কেজি গত সপ্তাহের থেকে বৃদ্ধি ২০ টাকা। গত সপ্তাহে খাসির মাংস ছিল ৮০০ টাকা কেজি বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা কেজি দরে।
ফার্মের মুরগির ডিমে বর্তমান বাজার দর ৩৬ টাকা হালি (৪টায় এক হালি)। গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৪ টাকা।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাজারে গিয়ে চাল কিনলে তেল কিনতে পারছে না। তেল কিনলে ডাল কিনতে পারছে না। বলা যায় মানুষের এক দুর্বিষহ অবস্থা যাচ্ছে। নিম্নআয়ের মানুষের আরো করুণ অবস্থা। তাদের তো খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে।
পৌর এলাকার কমলাপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জনি শেখ। তিনি বাজার করতে এসেছেন খোকসা পৌর কাঁচাবাজারে। তিনি বলেন, অনেকদিন যাবৎ বাজারে চালের দাম খুব বেশি। বর্তমানে ৪০ টাকায়ও মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে তেল, চিনি, ডাল, আটার দামও বাড়ছে। এছাড়া তেলের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমার এখন সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
খোকসা পৌর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শিমুল হোসেন বলেন, আমদানি কম তাই দাম বেশি। তিনি আরো বলেন, শীতকালীন সবজি শেষের দিকে তাই দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মায়ের দোয়া ভান্ডার আড়তের মালিক রহিম উদ্দিন শেখ বলেন, আমাদের উপজেলাতে যে পরিমাণ কাঁচামরিচ ও সবজি উৎপন্ন হয় তা আমাদের চাহিদা মেটে না। এজন্য বাইরে থেকে মরিচসহ অন্যান্য সবজি আমদানি করতে হয়। অন্যান্য স্থানে দাম বৃদ্ধির কারণে এখানে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
খোকসা পৌর বাজারের মুদি দোকনদার আমিয় পাল বলেন, হঠাৎ করে আমদানি কমে যাওয়ায় মুদি পণ্য ও মসলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভুক্তোভোগীরা বলছেন, বাজারে সরকারের তেমন নজরদারী নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে দু’চারজনের জরিমানা করে মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। বাস্তবে কোথাও তদারকী নেই।