শারমিন আক্তার সুন্দরী এক কিশোরী। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম হলে স্বপ্ন নিজেই সুশিক্ষিত হয়ে পরিবারের এবং সমাজের অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করবে। বাবা পেশা দারোয়ান এবং মা গহিনী। ৩ বোনের মধ্যে শারমিন সবার বড়। সবেমাত্র এসএসসি পাশ করছে।পরিবারের অভাব অনাটনের সংসারের চাহিদা সহ নিজের পড়ালেখা আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য একটি গার্মেন্টস কারখানা শ্রমিক হিসাবে যোগ দিয়েছে।
শারমিন কর্মজীবন আর পড়াশোনা বেশ মনযোগী ছিলেন। সুন্দর ভাবে কাট ছিল শারমিনের জীবনের সোনালি দিনগুলো। চাকুরি মাসিক উপার্জনের অস্বচ্ছল সংসারের স্বচ্ছলতার সুন্দর ভাবে দিনকাল চলছে।
আব্বুর একটি শিল্প কারখানা দারোয়ানের চাকুরি করেন। দীর্ঘ ৪/৫ মাস পর ছুটি নিয়ে আমাদের দেখতে আসে। আমি ও প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা সারে ৬টা পর্যন্ত চাকুরীতে থাকি। চাকুরি শেষ করে বাড়ি ফিরতে রাত ৮ টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। হঠাৎ বাসা ফিরে এসে দেখি রাতে বেলা আব্বু বাড়ির উঠানে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
আমি বাবাকে দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত। আব্বুকে খুব মিস করতাম। হঠাৎ আব্বুকে দেখে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিশিতে শেষ হয়ে গেল! আমি আব্বুর জিজ্ঞাস করতেছি আব্বু আপনি, কেমন আছেন? কখন আরছেন? আব্বু বললো মা’রে আমার কথা বাদ দাও। আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আমার মা কেমন আছেন? জ্বি আব্বু আমি ভাল আছি। এই বলে বাপ-মেয়ের কথোপকথন চলছিল।
আব্বু আমাকে বললো মারে তুমি পরিবারের বড় মেয়ে হয়ে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের ছেলের ভূমিকা পালন করতেছো। মা’রে তোমাকে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে দিন দিন চাকুরি আর পড়াশোনা চাপ আমার মাকে হতাশা করে তুলতেছে। নিজের জীবনের প্রতি একটু যত্ন নিও! এই বলে বাবা কান্নার ভেঙ্গে পড়লো। আমি বাবা বললাম আব্বু আপনি তো আমাদের সেই ছোট থেকে কষ্ট করে যাচ্ছেন। আমি শিক্ষিত হয়ে বড় সরকারি কোন দপ্তারে চাকুরি করবো।তখন আপনাকে আর পরিশ্রম করতে দিব না। আপনি শুধু বসে বসে খাবেন আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এখন আমাদের নিয়ে এতো চিন্তা করলে, আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন! আপনি একটু শান্ত হোন। আমরা সবাই ঠিক আছি আমাদের কতো সুন্দর দিনকাল যাচ্ছে।এইবার একটু হাঁসো দেন তো আব্বু।
আমার কথাগুলো আব্বু কষ্টের ভাঙ্গা মুখে মুচকি হাঁসি ছিল। আমার ছোট বোনদের নিয়ে আব্বু জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু ডাক দিয়ে বললো এইবার একটু থাকুন। মেয়েটা সারাদিন খুব পরিশ্রম করে আরছে।এইবার একটু শান্তি দাও। আমার শারমিন মা এইবার একটু হাত-মুখো পরিষ্কার করে নাও। দীর্ঘদিন পর সবাই একসাথে রাতে খাবার খাবো। আগামীকাল তো বাপ-মেয়ের চাকুরি খোলা।
আম্মুর কথা শুনে আমি হাত-মুখ পরিষ্কার করে, সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। আমার ছোট বোনগুলো ও খুব খুশি অনেকদিন পর আব্বুকে পেয়ে একসাথে ডাইনিং টেবিলে খাবার খাবো। আব্বু আসার সময় ২কেজি ওজনের একটা রুই মাছ কিনলো সাথে আজকের খাবারের নানা আয়োজন। আব্বু রুই মাছের বড় মাথা আমার খাবার প্লেট দিয়ে বললো মা আমার রুই মাছে মাথা খেয়ে নাও। আমি মাছে মাথাটা আব্বু খাবার প্লেটের তুলে দিলাম।আব্বু জোর করে মাছের মাথাটি আমার খাবার প্লেটের দিল, খেয়ে নাও মাছের মাথা খেলে বুদ্ধি পারবে। এই ভাবে শেষ হলো খাবারের পর্ব।
আমার শরীর খুব ক্লান্ত। তাই সবাইকে রাতে বিদায় জানিয়ে ঘুমাতে গেলাম। ভোর সকাল আব্বু ডাকছিল শারমিন মা এখনো ঘুমাচ্ছেন নাকি জ্বি আব্বু এই মাত্র ঘুম ভাঙ্গলো। আমি আরছি, আমি আসার আগে আব্বু বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। আব্বু দেরি হয়ে যাচ্ছে আম্মুকে বলে গেছে যেন আমার প্রতি যত্নবান হাওয়া জন্য। দেশের প্রতিদিন মেয়েরা নির্যাতিত হয়ে পত্রিকা শিরোনাম হচ্ছে আমি দূরে থাকি।কিন্তু মনটা সারাদিন পড়ে থাকে আমাদের সন্তানদের প্রতি।আমার খুব ভয় হচ্ছে মেয়ে চাকুরী করতেছে। তুমি বিশেষ করে সন্তান গুলো প্রতি খেয়াল রেখো।
আমি এসে আব্বুকে না দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। কি করলো একটু পর আমাকে বাহির হতে হবে চাকুরী যাওয়া জন্য, তাই ফ্রেস হয়ে সকাল নাস্তা খেয়ে বাহির হয়ে গেলাম। একটু পর চাকুরী যাওয়া জন্য সিএনজি অটোরিকশা আসবে।সেটা গাড়িটা যোগে প্রতিদিন সকাল যাই, আবার সন্ধ্যা ফিরে আসি। এই ভাবে দিনকাল যাচ্ছে।
প্রতিদিনের মতো আজকের সিএনজি অটোরিকশা যোগে চাকুরিতে গেলাম।কেমন জানি আজকে মনটা খারাপ রাখতেছে। বসকে বলছিলাম আজকে আমাকে ছুটি দেওয়া জন্য কিন্তু বস বললো কাজের চাপ বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না। কোন রকম দিনটা কাটতেছে।হঠাৎ ড্রাইভার কল দিয়ে বললো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আজকে সন্ধ্যায় গাড়ি আসবে না। এই কথাটা শুনের যেন মাথার ওপর আসমান ভেঙ্গে পড়লো!
আমার বিকল্প পথ হিসাবে লোকাল গাড়িতে যেতে হবে। চাকুরি শেষ করে, বাহির হয়েছি আধা ঘন্টা হচ্ছে এখনো গাড়ি পাইনি।একটু পর একটা সিএনজি অটোরিকশা পেয়েছি। সেখানে ড্রাইভার সহ ৪ জন গাড়িটি লোক রয়েছে। কি কবরো অন্য গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে। একটু ভেবে দেখলাম কি করবো গাড়িটি যেতে হবে।তবে আমার খুব ভয় লাগতেছে। ড্রাইভার আমার উদ্দেশ্য করে – বললো গেলে আসেন না হয় গাড়ি পাবে না? কি করবো ভয়ে ভয়ে সিএনজি অটোরিকশা গাড়িতে ওঠলাম। ড্রাইভার নিজের মতো গাড়ি চালাতে লাগলো। খানিকটা দূরে ফাঁকা নির্জন ঘন অন্ধকারে জায়গায় গিয়ে ড্রাইভার গাড়ি থামাল। আমি বললাম ড্রাইভার গাড়ি থামালেন কেনো? ড্রাইভার বললো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। হেঁটে যেতে হবে না অন্য গাড়ি ধরে যেতে পারেন? আমি সহ অন্য যাত্রী গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে ড্রাইভার সিএনজি গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে দ্রুত পালিয়ে গেল।
গাড়ি থাকার ৩ যাত্রী মধ্যে একজন আমার গলায় চুরি ধরে বললো চিৎকার করলে মেরে পেবো। বাকিরা সবাই আমার ওড়না পেঁছিয়ে আমার হাত মুখ চোখ বেঁধে পেললো। তারপর সবাই টেনে টেনে পরিত্যক্ত পাশে একটি জমিদার বাড়িতে নিয়ে গেল। একজনের চুরি ধরে আছে, বাকিরা আমার মুখে হাতে বাঁধন খুলে দিল। নির্জন বাড়ি জনমানব শূন্য। চারিদিকে ঘন অন্ধকার মনে হচ্ছে একটু ভূর্তের বাড়ি।
একটু পর মোমবাতি জ্বালানো হলো সেই স্থানে। মোমবাতি আলোতে দেখতে পেলাম পরিত্যক্ত বাড়িটিতে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য খালি বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি একটু তাদের দিকে থাকালাম। প্রথম দেখাতে ছিনতে পেরেছি। ওরা স্থানীয় রাজনীতি সাথে জড়িত। বড় প্রভাব শালী নেতাদের সাথে এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ব্যানারের ছবি আছে। আমার গলায় চুরি ধরা লোকটি হলো – সুজন বাকিরা হচ্ছে আবির আর সজল। আমি ওরা যাতে বুঝতে না পারে আমি ওদের ছিনতে পারছি ভয় ভয় দাঁড়িয়ে আছি।আমার হাত – পা গুলো থর থর কাঁপাচ্ছে৷ (চলবে…..)।