তারের জঞ্জালে ঢাকা পড়ে যাওয়া রাজধানীর ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে ধানমন্ডিতে ২০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ কাজের উদ্বোধন করেন।
ধানমন্ডি ২/এ রোডে ‘ধানমন্ডি আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক’ নামে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র।
উদ্বোধনকালে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। ১৪ বছরের মধ্যে একটি দেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার নজির সারা বিশ্বে আর নেই। মালয়েশিয়া করেছে ২৫ বছরে, সিঙ্গাপুর করেছে ৩৫ বছরে। সুতরাং যাদের সঙ্গে পার্থক্য দেখানো হয়, সে সব দেশের অনেক আগেই অনেক অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন।’
পৃথিবীর অন্যান্য শহরের মতো ঢাকা শহরকেও ধীরে ধীরে তারের জঞ্জাল মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, ‘ঢাকার সৌন্দর্য আমরা অনেকাংশেই উপলব্ধি করতে পারি না। কারণ বিভিন্ন কারণে ঢাকার সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায়। সেই ঢাকা পড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি মূল উপাদান হলো তার। শহরের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া বিদ্যুতের তার, অন্যান্য ইউটিলির তারের জঞ্জালের জন্য আমরা আমাদের সুন্দর ঢাকাকে উপভোগ করতে পারি না।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বহির্বিশ্বে যাই তখন বিমানবন্দর হতে বের হয়ে দেখি একটি খোলা জায়গা, স্বচ্ছ জায়গা। কোনো তারের জঞ্জাল নেই, চোখে কোনো বাঁধা নেই। সেক্ষেত্রে ওই শহরটিকে অনেক সুন্দর মনে হয়। একটা সুন্দর অনুভূতি উপলব্ধি হয়। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ঢাকা শহরের মাথার ওপরের তারের জঞ্জাল ভূগর্ভস্থে নিয়ে যেতে পারছি, নিয়ে যাব। তাই আজ আমরা আনন্দিত ।’
নিন্দুকেরা নিন্দার কথা বলেই যাবে। যে যাই বলুক, যত রকম বিভ্রান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করুক, জননেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু তার লক্ষ্য থেকে একটুও সরে দাঁড়াননি উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন। নিন্দুকের নিন্দার মাঝেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। নিন্দুকের নিন্দার মাঝেই এমআরটি’র কাজ গতিশীলভাবে চলছে। অচিরেই এমআরটি চালু হবে। নিন্দুকের নিন্দার মাঝেই কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল শুরু হয়ে যাচ্ছে। নিন্দুকের নিন্দার মাঝেই আমরা ঢাকা শহরের এই তারের জঞ্জাল সরিয়ে ভূগর্ভস্থ তারের সংযোগে রূপান্তরিত করছি। নিন্দুকেরা নিন্দা চালিয়ে যাবে। তারা যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় থেকে যাবে। পরবর্তী নির্বাচনেও নিন্দুকেরা নিন্দার জায়গায় থেকে যাবে। আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাবেন। ঢাকা এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের লালিত সোনার বাংলা গড়ার দিকে বীরদর্পে এগিয়ে যাবে।’
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি জানায়, ধানমন্ডি এলাকাকে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য এই এলাকার আগামী ২৫ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনা করে ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে আগামী ২৫ বছরে নতুন সংযোগ ব্যতীত বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য রাস্তা খননের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও ওভারহেড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ন্যায় আন্ডারগ্রাউন্ড বিতরণ ব্যবস্থায় ঝড়-বৃষ্টিতে ব্রেকডাউন অথবা তার ছিড়ে পড়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিকল বা মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
প্রস্তাবিত ডিজাইনে ধানমন্ডি এলাকায় চারটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে আধুনিক আরএমইউ মাধ্যমে এবং এই আরএমইউ গুলিকে নিজেদের মধ্যে আন্তসংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, ফলে কোনো স্থানের আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন কাটা পড়লে বা কোনো আরএমইউ বিকল হলে, ওই আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন বা আরএমইউ বাদে বাকি অংশ বিকল্প ব্যবস্থায় চালু থাকবে। ফলে বর্তমানের ন্যায় কোনো সমস্যার জন্য বৃহৎ এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় থাকবে না। অপরদিকে এখানে অত্যাধুনিক অটোমেশন ও কমিউনিকেশন সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকবে, ফলে আপদকালে অল্প সময়ের মধ্যে ফল্ট সনাক্তকরণ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রিস্টোর করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ যে, “ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধানমন্ডিতে ২০ কিলোমিটার ওভারহেড বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনকে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ-চীন জিটুজি স্কিমে দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ধানমন্ডি এলাকার ২০ কিমি ওভারহেড বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনকে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনায় রূপান্তর করতে ৫৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ও ডিপিডিসি’র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ও বিশেষ অতিথী হিসেবে ঢাকা-১০ সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদসহ করপোরেশন ও ডিপিডিসি’র বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।