বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, দেশ থেকে বড় অংকের অর্থপাচার হয়েছে। সাধারণত দুইভাবে সম্পদ পাচার হয়।
এগুলো হচ্ছে-আন্ডার ইনভয়েচিং (পণ্যের দাম কম দেখিয়ে) এবং ওভার ইনভয়েচিং (পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে)। এতে একদিকে দেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। অন্যদিকে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চার ভাগের একভাগ দামে এলসি খুলেছেন অনেক গ্রাহক। এই কাজটা করেছেন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য। তবে বাকি তিন ভাগ অর্থ নিশ্চয়ই হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন।
বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যেই অনেকাংশে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলো। এছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়ানোরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়াতে পারবে।
তবে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য ঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানতের সুদহার উন্মুক্ত করে দেওয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদ কোনোভাবেই তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম হতে পারবে না।
২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশেও নামিয়ে এনেছিল।
বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি যেখানে উঠেছে, তাতে ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদহারও বাড়াতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ নির্দিষ্ট থাকায় ঋণ ও আমানতের সুদের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহার তুলে নেওয়ার দাবি করে আসছিল।
নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণে সুদহারের ৯ শতাংশ সীমা অপরিবর্তিত রেখে নীতি সুদহার বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে পুনঃক্রয় চুক্তি বা রেপোর বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদে ধার নিতে হবে, যা এতোদিন ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
একইভাবে বিপরীত পুনঃক্রয় চুক্তি বা রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ধারের সুদহার বাড়বে। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মতোই ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়েছে। তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমায়নি, বরং বাড়িয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এ লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।