জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়নের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাক্রম পরিমার্জন একটি স্বাভাবিক ও চলমান প্রক্রিয়া। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য শিক্ষাক্রমকে প্রতিনিয়ত পরিমার্জন করতে হয়। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ শিক্ষাক্রম সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে যে নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলও এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি এই বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য ঘোষণা করছে যে উল্লিখিত প্রচারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এই রূপরেখার আলোকে প্রণীত শিক্ষাক্রম গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের ৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং হচ্ছে। এ শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ১০টি বিষয় হচ্ছে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্ম শিক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
ধর্ম শিক্ষা বিষয়টি দেশের চারটি ধর্মের শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক চারটি পাঠ্যপুস্তক রাখা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য হিন্দুধর্ম শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম শিক্ষা নামে চারটি পৃথক পাঠ্যপুস্তক রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকটি দেশের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের বিশিষ্ট শিক্ষকগণ প্রণয়ন করেছেন। এ শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় আচার, আচরণ ও মূল্যবোধ চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, ইবাদত, তাহারাত, নাজাসাত, ওজু, গোসল, তায়াম্মুম, সালাত, সাওম, আখলাকে হামিদাহ, আখলাক জামিমা ইত্যাদি বিষয়ে শ্রেণি উপযোগী আলোচনা রয়েছে। এছাড়া সুরা দোহা, সুরা তাকাসুর ও সুরা আল হুমাযাহ এই শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে। সর্বোপরি এই ষষ্ঠ শ্রেণিতে জীবনাদর্শ হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), হযরত খাদিজা (রাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রঃ) এর জীবনী শ্রেণি উপযোগিতা বিবেচনা করে পাঠ্য করা হয়েছে।
আমরা সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ বা পরিকল্পনা এনসিটিবি বা সরকারের নেই। শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাকে নিয়ে যে কোনো প্রকার বিভ্রান্তি জাতীর জন্য কল্যাণকর নয়। তাই আমরা শিক্ষাক্রম নিয়ে যে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।