সহজ সমীকরণ। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৬ রান। তবে তখনো নাটক দেখা বাকী। প্রথম বলে ৪ হাঁকিয়ে চাপ কমালেন মিরাজ। পরের বলে মিডউইকেটে মোহাম্মদ নবীর ক্যাচ হন তিনি। পরের বলে তাসকিন আহমেদ ক্যাচ দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। এরপর নাসুম আহমেদকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন জানাত। ডিপ থার্ডে ফরিদ আহমেদের ক্যাচ হন। এরপর শরিফুল ইসলাম চাপ উড়িয়ে পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মারেন। তাতেই ২ উইকেটে জয় বাংলাদেশের।
শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারী শিবির। তবে শুরুর চাপ সামলে মোহাম্মদ নবি ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান।
১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে তাওহীদ হৃদয় ও শামিম হোসেনের ৭৩ রানের বিধ্বংসী জুটিতে স্বস্থি পায় বাংলাদেশ। ১ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের হয়ে প্রথম আঘাতটি করবেন ফজলহক ফারুকি, এ সফরে যেন এটিই নিয়ম! তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈমের পর এবার রনি তালুকদারকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাতটি করলেন আফগানিস্তানের বাঁহাতি পেসার। ভেতরের দিকে ঢোকা বল পুরো মিস করে গেছেন রনি, ফলে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্প।
চতুর্থ বলে বেশ বাইরে পেয়ে কাভার দিয়ে চার মেরেছিলেন রনি, কিন্তু ফিরতে হলো ফারুকির বলেই। এরপর অদ্ভুতভাবে বোল্ড হলেন শান্ত। মুজিবকে অনেকটা জায়গা বানিয়ে স্লগ সুইপের মতো খেলতে চেয়েছিলেন। মিস করেন, কিন্তু তার পেটে/পিঠে লাগার পর বল গিয়ে লাগল স্টাম্পে! ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নে।
পাওয়ারপ্লেতে ৩ উইকেট হারিয়েছিল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারাল পাওয়ারপ্লের ঠিক পরের ওভারেই। ওমরজাইকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে পুল করতে গিয়ে মোটেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি লিটন। মিড অফে রশিদ খানের কাছে গেছে সহজ ক্যাচ। ১৯ বলে ১৮ রান করে থেমেছেন লিটন।
ইনিংসের ৭ ওভার ২ বলের পর শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর আবার খেলা শুর হয়। এরপর কিছুটা রানের গতি বাড়িয়ে ব্যাট করতে থাকেন সাকিব। তবে দলীয় ৬৪ রানে ১৭ বলে ১৯ রান করে আউট হন সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শামিম পাটোয়ারি। হৃদয় ও শামিম মিলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন। তবে দলীয় ১৩৭ রানে ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হন শামিম।
এরপর মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দিকে নিয়ে যায় হৃদয়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। ওভারের প্রথম বলে ৪ মারেন মিরাজ। তবে এরপর টানা তিন বলে মিরাজ, তাসকিন ও নাসুমের উইকেট তুলে নিয়ে নাটক জমিয়ে তুলে আফগান পেসার জানাত করিম।
শেষ দুই বলে প্রয়োজন হয় ২ রান। এ সময় ক্রিজে এসে চার মেরে সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শরিফুল ইসলাম। হৃদয় ৩২ বলে ৪৭ ও শরিফুল ১ বলে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
তবে আলাদা করে জয়ের কৃতিত্ব হৃদয় ও শামীম হোসেনকেই দিতে হবে। পঞ্চম উইকেটে দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে হারের শঙ্কা দূরীভূত হয়। ৩২ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কা। শামীমের ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৩ রান। আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরতেই ফিরলেন হজরতউল্লাহ জাজাই। পাওয়ার প্লের ভেতরেই আফগানিস্তানের দুই ওপেনারকে ফেরাল বাংলাদেশ। নাসুমের পর তাসকিনের আঘাত। চতুর্থ ওভারে তাসকিনের লেগ স্টাম্পের ওপর করা স্লোয়ার ডেলিভারি অন সাইডে বড় শটের চেষ্টা করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু গতি কম থাকায় যতটা দূরে পাঠাতে চেয়েছিলেন সেটা পারেননি তিনি। ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরপর পঞ্চম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই উইকেট শিকারে যোগ দিলেন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলে কট বিহাইন্ড হলেন ইব্রাহিম জাদরান। পঞ্চম উইকেট জুটিতে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন মোহাম্মদ নবী। এই দুই ব্যাটারের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভীত গড়তে থাকে আফগানিস্তান। কিন্তু ১৪তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হন জাদরান। ২৩ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে দলীয় ৮৭ রান প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
জাদরান ফির গেলেও এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী। শেষ দিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ঝড়ো ১৮ বলে ৩৩ রান এবং অভিজ্ঞ নবীর ৫৪ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব। এছাড়া ১ টি করে উইকেট পান নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি মিরাজ।