দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) শতাধিক আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিকেলে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হলে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে প্রধান সড়কের এক দিক থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় অন্যদিক থেকে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এ সংঘর্ষে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেবসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।
জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের প্রধান সড়ক থেকে ভেতরের রাস্তায় যেতে বলে পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার কারণে ভেতরের রাস্তায় জায়গা না হওয়ায় প্রধান সড়কে ভিড় ছিল।
এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পাল্টা আক্রমণ করে। হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে পুলিশ পরে কথা বলবে।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কাঁচপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল ও টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে কাঁচপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়।
জানা যায়, কয়েক দফা ওই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কারণে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ টিয়ার সেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের পর পরই কাঁচপুর এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা কর্মসূচিতে শনিবার বিকেলে সোনারগাঁওয়ে কাঁচপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আর্ন্তজাতিক-বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপুর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশ এসে নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কের একপর্যায়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করলে নেতাকর্মীরা রাস্তা থেকে সরে যায়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা আবারো লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ।
এ সময় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। প্রায় আধা ঘণ্টার এই ধাওয়া পাল্টার সময়ে পুলিশ টিয়ার সেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেটে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমাদের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়ার সময় অতর্কিত লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়েছে। এতে আমাদের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হন।
সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, অনুমতি ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি করে মহাসড়ক অবরোধ করতে চেয়েছিল। মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বলায় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আত্মরক্ষার্থে আমরা কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই। বর্তমানে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।