জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি ও পয়নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে আমাদের যে লক্ষ্য, তা থেকে আমাদের বিশ্ব বিপজ্জনকভাবে দূরে সরে যাচ্ছে। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব এক বার্তায় এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পানি আমাদের এই বিশ্বের প্রাণের উৎস। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও অবকাঠামো পর্যন্ত সবকিছুতেই মানুষের টিকে থাকা ও ভালো থাকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতির সমৃদ্ধির জন্য পানি অপরিহার্য। কিন্তু এই প্রাণের উৎসের প্রতিটি ফোঁটা দুষণের শিকার হচ্ছে, অতিব্যবহারে অপচয় হচ্ছে। এদিকে চলতি দশকের শেষ দিকে পানির সরবরাহের তুলনায় চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পানির প্রাকৃতিক চক্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে দুষণ যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছাচ্ছে। ফলে পানিজনিত দুর্যোগ, রোগের প্রাদুর্ভাব, পানির স্বল্পতা ও খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি অবকাঠামো, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহের শৃংখলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য এসব ব্যর্থতার কারণে শত কোটি মানুষকে যে মূল্য দিতে হচ্ছে, তা-ই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই মানুষগুলো নিরাপদ পানি ও পয়নিষ্কাশনের সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত।
মহাসচিব জানান, বিশ্বের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৫ জনকে এখন পানির সার্বিক চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে হয় উন্মুক্ত জলপ্রবাহ ও পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে, নতুবা উচ্চমূল্যে তথাকথিত নিরাপদ পানি কিনে। ২২ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত পরিবেশে কিংবা অপরিচ্ছন্ন, বিপজ্জনক অথবা ভাঙাচোরা শৌচাগারে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ৪৪ শতাংশের ক্ষেত্রে বর্জ্যপানি অপরিশোধিত অবস্থায়ই প্রকৃতিতে ফিরছে। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছরের বিশ্ব পানি দিবস মানবজাতির প্রাণের উৎস রক্ষা, টেকসই ব্যবহার এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমাদের ব্যক্তি ও সামগ্রিক পর্যায়ে দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। জাতিসংঘ পানি সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এই সময়টা সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব দেশের সরকার, স্থানীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়িক সমাজ, বিজ্ঞানী, তরুণ সমাজ, নাগরিক সংগঠন ও সমাজকে সম্মিলিতভবে কাজ করার এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন ধারণা প্রণয়ন ও বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক সময়।
‘পাশাপাশি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে জি-২০-এর নেতৃত্বে সরকার, ব্যবসায়িক সমাজ ও বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। জীবাশ্ব জ্বালানির প্রতি আমাদের আসক্তি কাটিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুকতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতাও করতে হবে। ’ যোগে করেন গুতেরেস।
তিনি বলেন, অপচয় করার মতো এক মুহূর্তও আমাদের হাতে নেই। আসুন, ২০২৩ সালকে আমরা পরিবর্তন এবং মানবজাতির প্রাণের উৎস রক্ষায় বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করি। আসুন, পানির সুরক্ষা, টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সবার জন্য সমহারে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করি।