ইউক্রেনে হামলার দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শাস্তি দিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে তাদের এমন সিদ্ধান্তে জ্বালানি তেলের বাজারে চলছে অস্থিরতা। ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ছাড়িয়েছে ১২০ ডলার। দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেড়েই চলছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
এরআগে ১৯৭০ সালের দিকে পশ্চিমাদের শাস্তি দিতে তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আরব রাষ্ট্রগুলো। অর্থাৎ তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ পশ্চিমারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও তেলকে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। অর্থাৎ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুশ অর্থনীতি দুর্বল করতে চাইছে।
সেই ধারাবাহিকতায় ৩১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার সব ধরনের জ্বালানি তেলসহ বেশ কিছু ব্যাংকের ওপর ষষ্ঠ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা পুরোপুরিভাবে কার্যকর হবে এ বছরের শেষের দিকে। তবে অস্থায়ীভাবে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আমদানি অব্যাহত থাকবে। এ খবর প্রকাশের পরই মূলত তেলের দাম বেড়ে মার্চের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নিজেদের অর্থনীতির ক্ষতি হলেও ইইউভুক্ত দেশগুলো রাশিয়াকে শাস্তি দিতে একমত। এর মাধ্যমে ক্রেমলিনের সঙ্গে অঞ্চলটির ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হতে চলছে। ফলে রাশিয়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র আরও বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ রাশিয়ার তেলের বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশটির মোট রপ্তানির অর্ধেকই যায় এখানে।
প্রশ্ন জাগে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কতটুকু লাভবান হবে রুশ বিরোধীরা। কারণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সমুদ্রে পরিবহন করা তেলে। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা বাড়বে। এরই মধ্যে তেলের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এর কারণ হলো ভ্রমণ, ড্রাইভিং ও মহামারির নিয়ন্ত্রণ।
এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ চীন এরই মধ্যে করোনার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে শুরু করেছে। এতে সেখানেও তেলের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেড়ে গেছে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের দাম। অন্যদিকে তেল রপ্তানিকারকদের সংস্থা ওপেক ও তার মিত্ররা এখনো তেলের উৎপাদন বাড়ানো দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। সরবরাহ বাড়ানো ক্ষেত্রে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একদিকে সমন্বিতভাবে কম সরবরাহ, অন্যদিকে চাহিদা বৃদ্ধি। ফলে বাজারে তেলে মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
সত্তরের দশকে আরবদের নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমাদের যে ক্ষতি হয়েছিল তা সামান্যই। যদিও সেটি ছিল তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বেড়েছিল নিজস্ব সক্ষমতা। এবার সেই সুফল রাশিয়া পাবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।