Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

পঁচাত্তরের প্রতিরোধযোদ্ধারা অবেহেলিত কেন?

বিশেষ প্রতিনিধি:

মৃত্যুর দুয়ার হতে ফিরে আসা বঙ্গবন্ধু, যাদের জন্য এই ভয়ংকর দুয়ারে গেলেন শেষে তাদের হাতেই তাকে জীবন দিতে হল। বিশ্বাসাতকের দল তার ভালবাসার ও বিশ্বাসের কোনো মূল্য দেয়নি। ১৫আগস্ট বিশ্বাস ঘাতকতার ও বর্বরতার এক চরম দিন। যে মানুষটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিল, স্বাধীন দেশের বিপথগামীদের হাতেই সে মানুষটিকে জীবন দিতে হল। তার মৃত্যুতে চুপসে গেল তার প্রাণের দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তার পাশে থাকা নেতাদের অনেকেই লাশ সিঁড়িতে ফেলে রেখে খুনী সরকারে অংশ নিয়ে শপথ নিল।

তার শেষ বিদায়ে একটা সুগন্ধী সাবান ও একটা নতুন কাফনের কাপড়ও পর্যন্ত নিয়ে আসার সাহস পেল না কেউ। ৫৭০ কাপড় কাচা সাবান দিয়ে হল তার শেষ গোসল। রেডক্রিসেন্টের রিলিফের সাদা শাড়ি কেটে কাফন পরানো হলো বঙ্গবন্ধুকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মারা যাওয়ার পরে কীসের ট্যাংক, পুলিশ আর্মির হুমকি? মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তখন তো সবার রাস্তায় নেমে আসার কথা ছিল। যে জাতির স্বাধীনতা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সে জাতি কেন এমন স্তব্ধ, বিমূঢ় ও কাপুরুষ হয়ে গেল?

নিজের জীবনের চেয়ে মহামূল্যবান তো মানুষের আর কিছুই নেই। তা-ইতো হারালো জাতির পিতা ও তার পরিবার। তবে হ্যাঁ, কেউ কেউ কাপুরুষ বিশেষণ পায়ে পিষে নেমেছিল প্রতিরোধ যুদ্ধে। পত্রিকায় খবর বেরোচ্ছে সেদিনের সেই বীর প্রতিরোধ যোদ্ধারা আজ অবহেলিত। তাদের কোনো খবর নেয় না বঙ্গবন্ধুর ইমেজ ব্যবহার করে ক্ষমতার সুখ সম্ভোগে লিপ্ত কুশীলবেরা।

কয়েকটি সংবাদ শিরোনামই তার প্রমাণ। ১৭আগস্ট,২০১৬ ইং তারিখে শিরোনাম হয়েছেঃ ওদের খবর রাখেনা কেউ। ১৪ আগস্ট ২০১৬শিরোনাম হয়েছেঃ ফাঁসির মঞ্চে বিশ্বজিৎ নন্দী। ১৩ আগস্ট, ২০১৬ শিরোনাম হয়েছেঃ চোরাগোপ্তা হামলা অভিযানে বিপর্যস্ত সেনা পুলিশ। ১৫ আগস্ট, ২০১৬ শিরোনাম হয়েছে প্রতিরোধ ক্ষতের দাগ শুকায়নি ৭৮ উপজাতি পল্লীতে। ১১ আগস্ট,২০১৬ বাংলাদেশ প্রতিদিনে জাতীয় মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন কমান্ডারের ছবি সহ সংবাদ শিরোনাম ছিলঃ পঁচাত্তরে সশস্ত্র প্রতিরোধের অজানা কাহিনী। ১১ আগস্ট দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছেঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল ৮টার পরপর প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের হয় তৎকালীন বরগুনা মহকুমায়। সেখানকার মহকুমা এসডিও হিসেবে দায়িত্বে থাকা সিরাজ উদ্দীন আহমেদের সহযোগিতায় বরগুনার বাকশাল, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন ও গগনবিদারী আওয়াজ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। প্রায় একই সময়ে আমতলী,বামনা,বেতাগী,পাথর ঘাটায় বাকশালের নেতাকর্মীরা হত্যার প্রতিবাদ জানায়।

বেলা ১১টায় দ্বিতীয় প্রতিবাদ বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয় নেত্রকোনার হাওড়বেষ্ঠিত উপজেলা মোহনগঞ্জে। সাবেক গণপরিষদ সদস্য , আওয়ামী লীগ নেতা ডা.আখলাকুল হোসাইন আহমেদের নির্দেশে ছাত্র লীগ, যুবলীগ,ও আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক সদস্য মোহনগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শিয়ালজানি ব্রিজ হয়ে লোহিয়ার মাঠ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। ১৬ আগস্ট বরগুনা মহকুমার এসডিও’র বাসভবনে ছোট পরিসরে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় মোহন গঞ্জের মল্লিক পুরে। পঁচাত্তরের ১৯ আগস্ট বিকেল ৪টায় মল্লিক পুরের হরেন্দ্র তালুকদারের বাড়িতে শোকসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডা.আখলাকুল হোসাইন।

ঢাকার সেগুনবাগিচায় কথা হয় দুজন প্রতিরোধ যোদ্ধা স্বপন চন্দ ও আক্কেব আলীর সাথে। এমনকি স্বপন চন্দ ভোরের পাতা কার্যালয়ে এসেও আপেক্ষ করে অনেক কথাই বলে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পেয়ে তারা চরম ক্ষুব্ধতায় জেগে ওঠেন। করনীয় কর্মের কোনো নির্দেশনা না পেয়ে তারা হাঁফিয়ে উঠছিলেন।।স্বপন চন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পেয়ে আমরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে মোহনগঞ্জ থানা সংলগ্ন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব: ১ সাজ্জাদুল হাসানের বাবা তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ডা.আখলাকুল হোসাইন আহমেদের বাসায় মিলিত হই। তিনি আমাদের প্রতিবাদ মিছিলের নির্দেশ দেন। আমরা তার নেতৃত্বে শহরে মিছিল করে শিয়ালজানি ব্রিজ হতে লোহিয়ার মাঠ পর্যন্ত যাই।

শহীদ মিনারে বক্তৃতা করেন তৎকালীন যুবলীগ সভাপতি মীর্জা গনি, যুবলীগ নেতা স্বপন চন্দ, ছাত্রলীগ সভাপতি আক্কেব আলী,ছাত্র নেতা মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চন প্রমুখ। ওই দিনই দুপুরে বঙ্গবন্ধুর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন এক অজ্ঞাতনামা দুধ বিক্রেতা। অতঃপর জানাজায় অংশ গ্রহনকারীরা পুলিশি হামলার শিকার হন।

১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দুই প্রতিরোধ যোদ্ধা স্বপন চন্দ ও আক্কেব আলীর দুচোখ ছলছল করে ওঠে। তারা জানান বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিক বঙ্গবন্ধুর শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় নেত্রকোনার মোহন গঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামের হরেন্দ্র তালুকদারের বাড়িতে। শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা.আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ও পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা.জগদীশ চন্দ্র দত্ত। শোকসভায় বক্তৃতা করেন, সুনাম গঞ্জের ধর্মপাশার আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য আব্দুল হেকিম চৌধুরী, ময়মনসিংহের গৌরী পুরের সাংসদ হাতেম আলী,বারহাট্টা-কলমাকান্দার সাংসদ আব্দুল মজিদ তারা মিয়া, সাবেক গণপরিষদ সদস্য আব্বাস উদ্দিন খান, সুনাম গঞ্জের কমিউনিষ্ট নেতা বরুন রায়,খালিয়াজুরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান,গৌরীপুরের যুব লীগ নেতা রজব আলী (পরবর্তীতে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকার পাঁচ গাঁওয়ে), মোহন গঞ্জের মানশ্রী গ্রামের যুব লীগ নেতা স্বপন চন্দ ও মোহন গঞ্জ উপজেলা ছাত্র লীগ সভাপতি আক্কেব আলী প্রমুখ।

শোকসভার দিনের পরপরই আখলাকুল হোসাইন আহমেদ গ্রেফতার হন। আক্কেব আলী ও সুবোধ রায়কে মোহন গঞ্জ পাইলট হাই স্কুল মাঠে লেঃ তারেকের নেতৃত্বে মুশতাক সরকারের পেটোয়া বাহিনী শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে।তাদেরকে ঝুলন্ত অবস্থায় বেদম প্রহার করে। এই আনুষ্ঠানিক শোকসভার পরপরই শুরু হয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উপর আরও দমন পীড়ন,গ্রেফতার ও খুনের ঘটনা। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ছাত্র লীগ নেতা আক্কেব আলী,মাইলোড়ার সুবোধ রায়, মোহন গঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামের প্রয়াত নিমাই চন্দ্র তালুকদার,একই গ্রামের প্রয়াত হরেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার, প্রয়াত খোকা চৌধুরী ও নৃপেন্দ্র মল্লিক।

মল্লিকপুরের বঙ্গবন্ধু হত্যার আনুষ্ঠানিক শোকসভার পরপরই মুশতাক সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকেরা তাদের ধরে নিয়ে নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালায়। এই প্রতিরোধ যুদ্ধ নিয়ে ১১ আগস্ট,২০১৬ তারিখের দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছে,শুরু হল যুদ্ধ: এ যুদ্ধ শুধু প্রতীকী যুদ্ধ ছিল না,বরং ময়মনসিংহ, শেরপুর,নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত বর্তী অনেক বড় এলাকা দখল করে নিয়েছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সীমান্তবর্তী এলাকার পাঁচটি বিডিআর ক্যাম্প ও দুটি থানা দখল করে নিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ প্রতিরোধ যোদ্ধারা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাধিকবার সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিলেন তারা। যুদ্ধে চার শতাধিক প্রতিরোধ যোদ্ধা শহীদ হন। তারা জয়বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু,শ্লোগান দিয়ে হাসতে হাসতে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন জাতির জনকের হত্যার প্রতিবাদে।’

আরও লিখেছে, ২২ আগস্ট টাঙ্গাইলের তৎকালীন জেলা গভর্ণর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ছয়জন সঙ্গী নিয়ে জামাল পুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে গিয়ে হত্যাকারী অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দেন তিনি। তার আহবানে টাঙ্গাইল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে মুক্তিযোদ্ধা,ছাত্র লীগ, যুব লীগের কিছু নেতাকর্মী ভারতে গিয়ে যোগ দেন কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে। পঁচাত্তরের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ বাহিনীর একটি গ্রুপ যমুনা নদী হয়ে নৌপথে প্রবেশ করে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নিশ্চিন্ত পুর চরে বাংলাদেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে বগুড়া জেলা যুবলীগের তৎকালীন সাধারন সম্পাদক আব্দুল খালেক খসরু নিহত হন।

১৪ আগস্ট,২০১৬ বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে লেখা প্রতিবেদনে শিরোনাম করেছে,ফাঁসির মঞ্চে বিশ্বজিৎ নন্দী। লিখেছে:গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হন বিশ্বজিৎ। এরপর প্রায় পাঁচ মাস টানা সেনা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অন্ধকার কুঠুরিতে রেখে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তার উপর চালায় নির্মম নির্যাতন। মুক্তিেযাদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী স্বাধীন দেশে যখন নিশ্চিন্ত মনে লেখা পড়ায় মনোযোগী হলেন ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যা তাকে বিচলিত করে তুলে।

বিশ্বজিৎ বলেন, আমরা মুজিব ভক্তরা কোনভাবেই এ নৃশংস হত্যা মেনে নিতে পারছিলাম না। সন্তানের সামনে বাবার রক্তাক্ত লাশ -আমার জীবনের সবকিছু যেন উল্টেপাল্টে দিল।’ এই বিশ্বজিৎ নন্দীর জন্ম ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার প্রত্যন্ত গ্রাম গোবিন্দ পুরে। ফাঁসির মঞ্চ হতে ফিরে আসা যাবজ্জীবন কারাদন্ডভোগী এই প্রতিরোধ যোদ্ধার দিন কাটছে আজ চরম কষ্টে ও অবহেলায়।কথা হয় কলমাকান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী সতর হাটিতে বসবাসকারী শিশির দাজেল(৬৩) এর সাথে।তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যোদ্ধা দুটোই।

স্নাতক ডিগ্রীধারী এই বীর যোদ্ধা বলেন,বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যার প্রতিবাদকারী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কথা কেউ বলছেনা। আমার দুঃখ আমাদের কেউই মূল্যায়ন করলো না।’ পত্রিকার বিভিন্ন শিরোনাম গুলোই তৎকালীন সময়ের প্রতিরোধ যুদ্ধের চিত্র ও তাদের বর্তমান অবস্থা বলে দেয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ কারী সেই প্রতিরোধ যোদ্ধারা আজ নিরবে নিভৃতে অবহেলিত জীবন পার করছে।তাদের চেনে না কেউ। জানে না কেউ। বিনা চিকিৎসায়, বিনা পথ্যে, অনাহারে অর্ধাহারে মারা গেছে অনেকেই। যারা বেঁচে আছে তাদের জীবনও যন্ত্রনাময়। বাংলাদেশে মোট কতজন প্রতিরোধ যোদ্ধা ছিল তার কোনো তালিকাও করেনি কোনো সরকার। ১৫ আগস্ট আসে ১৫ আগস্ট যায় তাদের কেউ স্মরণ করেনা। বরং যেসব কাপুরুষেরা মুজিব হত্যার পরে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা হয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে লুকিয়েছিল কিংবা খুনী মুশতাক সরকারের পদলেহী ছিল আজ তারাই অনেক ক্ষেত্রে ১৫ আগস্টের মঞ্চে থাকে।

ইতিহাসের চরম ট্র্যাজেডি হল যারা একাত্তরে যুদ্ধ করেছে ও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছে তাদের অনেকেরই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই। অথচ অনেকেই ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। কোনো অদৃশ্য কারণে এই মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেলোনা?

 

জানা গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সীমান্ত পাড়ি দেয়া প্রায় ৮শত বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী প্রতিরোধ যোদ্ধা এখনও ভারতের মেঘালয়ে ও আসাম প্রদেশে চরম দূর্দশায় অবস্থান করছেন। দেশে অবস্থানকারীরাও অনেকেই হামলা,মামলায় পর্যুদস্ত হয়েছেন। ঢাকার টঙ্গীতে বসবাসকারী প্রতিরোধ যোদ্ধা স্বপন চন্দ(জন্মভিটা নেত্রকোনার মোহন গঞ্জের মানশ্রী গ্রামে)তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যোদ্ধা। তিনি আজও পাননি মুক্তিযোদ্ধার সনদ। এরকম আরও অনেকেই রয়েছেন। অভাব,অনটন আর অবহেলাই আজ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিত্য সাথী।

কলমাকান্দার প্রতিরোধ যোদ্ধা রশিদ চিশতি মারা গেলে তার লাশ দাফন করতেও বাধা দেয়া হয়। গোপাল বাড়ির প্রতিরোধ যোদ্ধা শহীন্দ্র হাজং মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে পেটের ভাত জুটাচ্ছেন। ১৯৭৫ হতে ১৯৭৮ পর্যন্ত সময়ের সরকার গুলো প্রতিরোধ যোদ্ধাদের `মুজিব ভক্ত -দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও সেই অবহেলা লাঞ্চনা অব্যাহত থাকে।

দূর্গাপুরের বারোমারি গ্রামের শেখর হাগিদক ও শংকর হাগিদক প্রতিরোধ যুদ্ধে যাওয়ার কারণে তাদের বাবার আড়াইশ একর জমি বিক্রি থেকে পাওয়া সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পুলিশ বিডিআর। এরকম অসংখ্য প্রতিরোধ যোদ্ধার স্বর্বস্বান্ত হওয়ার কাহিনী রয়েছে।

কথা হয় কলমাকান্দা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দারিংয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বর্তমান বয়স ১০০বছর ৭মাস। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি ও পরবর্তীতে ১৯৭৫সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে ভারতে চলে যাই। দীর্ঘ ২৫ বছর প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসাবে নির্বাসনে ছিলাম। ২০০০সালে আমি দেশে ফিরি। দরখাস্ত করার পরও এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সনদ পাইনি। এখন পর্যন্ত সরকারী কোনো ভাতা ও অনুদান জুটেনি। এই বুড়ো বয়সে চরম কষ্টে দিন পাড় করছি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নেই।

Check Also

জমকালো আয়োজনে রিয়াদে মাই টিভির ১৫ তম বর্ষ উদযাপন

ফারুক আহমেদ চান, মধ্যপ্রাচ্য ইনচার্জ!”রিয়াদের বাথা সানসিটি মেডিকেল এর অডিটোরিয়ামে জমকালো আয়োজনে দেশের জনপ্রিয় টিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x