বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক-রুমি নোমান
স্বাধীনতা অর্জনের পর নতুন মানচিত্রে অংকিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত বিদ্যাপীঠটি একটি অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ও আন্তর্জাতিকীকরন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশের এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়’টি।
দীর্ঘ ৪৩ বছরের ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞানের প্রসার ব্যবস্থায় অনবদ্য কাজ করে চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় এর আঙিনায় পদচারণা ১৫হাজার শিক্ষার্থীর। দেশের সেবায় শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববান ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত রকমের প্রয়াস। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের সুবিধা প্রদানে আগামীর দিনগুলোতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।
আজকের বিশ্বে শিক্ষার্থীদের বিকাশ সাধনের পূর্বশর্ত হিসেবে অন্যতম হচ্ছে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন। জ্ঞান অর্জন ও সঠিক বিকাশের জন্য চিকিৎসা হলো শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত সকলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আলাদা ভবন বিশিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্র। সুদীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা সেবার মান সংকটপূর্ণ। বিশালদেহী ভবন পারছে না শিক্ষার্থীদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পূরণ করতে। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে প্রায় ২৪ কি.মি দূরে হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবী বলেই মনে করেন সচেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
৪৪তম বছরে পদার্পন করেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত আধুনিক চিকিৎসা। দেশে ও বহির্বিশ্বে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রযুক্তিগতভাবে ধেই-ধেই করে এগিয়ে গেলেও এতদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কেন্দ্রে মিলছে না সামান্য এক্স-রে করার যন্ত্রাংশ। অবকাঠামোগত দিক থেকে উন্নয়ন রয়েছে। এছাড়া অল্প কিছু চক্ষু সরঞ্জামাদি ও মেশিনারিজ থাকলেও জনবলের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কাঙ্খিত সেবার অন্তরায় হিসেবে চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন- “শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পূর্বে নিয়মিত ১৪জন ডাক্তার থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১০জন ডাক্তার বসেন এবং তারা ৩টি শিফটে নিয়োজিত আছেন। আর আগের তুলনায় বেশ কিছু চিকিৎসা প্রযুক্তি আমরা সংযোজন করেছি। আল্ট্রাসোনো-গ্রাম সহ বেশ কিছু প্রযুক্তি এখন রয়েছে। আগামীতে আরো প্রজেক্ট সংযোজন করা হবে।“ আবার সর্বদা শিক্ষার্থীরা স্বল্প কিছু ঔষধ ব্যতিত তেমন কোনো সেবাও পান না। “নাপা ও বায়োসিন দেয়া হয় গড়পড়তা হারে”- মন্তব্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ জানান- “অত্যাধিক কাশির জন্য আমি মেডিকেলে যাই, ডাক্তার একটি সিরাপ লিখে দিলেও তা মেডিকেল থেকে পাইনি।” পর্যাপ্ত ঔষধের সংকটবোধ করছেন আবাসিক অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীরা। এদিকে ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন- “ঔষধ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। বিগত সময়ে ১২ লক্ষ টাকার টেন্ডারে ঔষধ নেয়া হয়েছিল, তবে এবার ১৪লক্ষ ৯০ হাজার টাকার টেন্ডার দেয়া হয়েছে ফলে আগামীতে পর্যাপ্ত ঔষধ পাবে শিক্ষার্থীরা।“ এভাবে আশ্বাস এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
করুণ আর্তনাদেও মিলছে না এম্বুলেন্স সুবিধা। এ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও জরুরী যোগাযোগে সেবা দিতে নিয়মাবলীর শর্ত তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান “সরাসরি এ্যাম্বুলেন্স প্রদানের নিয়ম নেই, সেবা নিতে আগে শিক্ষার্থীর হল প্রভোষ্টকে জানাতে হবে এবং প্রভোষ্টের সাথে প্রশাসন কথা বলে নিয়মাবলী অনুসরণের মাধ্যমে এ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়।“
তবুও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের কামনা, প্রান্তিক জনপদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিকেল সেন্টারটি আর খুড়িয়ে নয়, নিশ্চিত করবে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা।