তুষার খান, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি।। নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এক মাদরাসা ছাত্রের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে বাধা দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাধার মুখে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একটি টিম মাদানীনগর মাদরাসার পাশে স্থানীয় কবরস্থানে যান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামশিদ ইরাম খানের উপস্থিতিতে কবর খুড়তে গেলে তাতে বাধা দেন মামলার বাদী। এই সময় স্থানীয় মাদরাসার ছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। তাদের বাধায় লাশ উত্তোলন না করেই কর্মকর্তারা বেলা দেড়টার দিকে সেখান থেকে চলে যান।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক ঘন্টা আগে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর গুলিবিদ্ধ হন ১৯ বছর বয়সী হাফেজ সোলাইমান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামশিদ ইরাম খান জানান, “আদালতের আদেশে আমরা মরদেহ উত্তোলন করতে চাইলে মামলার বাদী শামীম কবির তাতে আপত্তি জানন। নিহতের পরিবারের লোকজন ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে মরদেহ তুলতে দিতে চান না। আমরা তাদের মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে জানালেও তারা তাতে রাজি হননি। কোনো ধরনের পাবলিক নুইসেন্স যেন সেখানে তৈরি না হয়, সেজন্য আমরা সেখান থেকে চলে আসি।”
এই দফায় ব্যর্থ হলেও মরদেহ উত্তোলনের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক হাসিনা বেগম বলেন, “দাফনের আগে ময়নাতদন্ত করা হয়নি। মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্ত করতে হবে। কিন্তু মরদেহ না তোলার জন্য আদালতে বাদীপক্ষ আবেদন করবে বলে জানিয়েছে। আদালত থেকে যদি অন্য কোনো নির্দেশনা আসে সেক্ষেত্রে ওই নির্দেশনা মেনে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।”
জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহতের ভগ্নিপতি শামীম কবির বলেন, “আমরা পুলিশকে আগেই জানিয়েছি, যদি মরদেহ উত্তোলন ছাড়া কিছু হয় তাহলে আমরা রাজি আছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মরদেহ উত্তোলন ছাড়া সম্ভব না। নিহতের বাবা-মা অর্থাৎ আমার শশুর-শাশুড়ি কোনভাবেই মরদেহ উত্তোলনের পক্ষে না। প্রয়োজনে আমরা মামলা তুলে নিবো।”
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা হেফাজতে ইসলামের মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, নিহত সোলাইমান হেফাজতে ইসলামের কর্মী ছিলেন। তার পরিবারের লোকজনের আহ্বানে তারা কবরস্থানে গিয়েছিলেন।
গত ২২ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শামীম কবির। মামলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার শ্যালক হাফেজ সোলাইমান ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে শিমরাইল এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদরাসার পাশে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মামলার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের কথা উল্লেখ থাকলেও কবরস্থানে নিহতের নামফলকে যাত্রাবাড়ি লেখা রয়েছে।
যদিও, এ বিষয়ে কথা বলতে বাদীর মুঠোফোরে নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।