পরীক্ষা হলে ফেসবুক লাইভে এসে সমালোচনার সৃষ্টি করেন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন। এ ঘটনার পরই ঝিনাইদহের এ উপজেলাটির ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বাতিলের কারণ হিসেবে ‘মেয়াদ উত্তীর্ণের’ কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ৮ এপ্রিল দুপুরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা দেওয়ার সময় ফেসবুক লাইভে যান মনির হোসেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ফেসবুক লাইভে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমরা তো ফার্স্ট ছাত্র, এজন্য সামনের বেঞ্চে বসেছি। আমি ইংরেজিতে মাস্টার্স করা। স্যাররা ঘুমাচ্ছেন। আমি ইংরেজিতে লিখেছি, সালামও লিখেছি। ভিডিওতে পাশের শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে বলে, তুই কী লিখেছিস ?’
‘আমরা না লিখে এ প্লাস পেতে চাই। ওই পাশে একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষার খাতায় বায়োডাটা লিখে দিয়েছি। আর গ্রুপের জায়গায় লিখেছি, এমপি আনার গ্রুপ করি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ড-মোড ভেঙে ফেলবানে। জয়ও তাই লিখেছে। আমার লাইভটি কালীগঞ্জ ভাইস চেয়ারম্যান দেখছেন। তিনি মন্তব্যে লিখেছেন, গল্প না করে তোরা খাতায় লেখ।’
লাইভে তিনি আরও বলেন, ‘তোরা তো জীবনে পরীক্ষা দিতে পারবি না, রোজার ভিতর একটু পানি খাতি চাইলাম। রোজার ভিতর পরীক্ষা দিচ্ছি। গোল্ডেন পাবো, এ দেখ সালামও আছে। আমরা তো সব এক গোয়ালেরি গরু। পরীক্ষার হলে লাইভে আছি। আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাসতো পাবোই। ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছেন।’
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহাবুব উল ইসলাম জানান, পরীক্ষার হলে ফেসবুকে লাইভ দেওয়ার ঘটনায় শনিবার তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরীক্ষার হলে কে কোন সংগঠনের নেতা এটা আসল পরিচয় নয়। সবাই শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হবে।
সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন জানান, পরীক্ষা কক্ষে ফেসবুক লাইভে এসেছিলাম, এটা আহামরি কিছু না। বিষয়টি খারাপ কিছু বলে আমি মনে করছি না। পরীক্ষা কক্ষে তখন আমাদের ম্যাডামরা ছিলেন। সে সময় আমি নিজের ফোন থেকেই ফেসবুকে লাইভ করি। তবে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল একটা পদে থেকে কাজটা করা উচিত হয়নি। কিন্তু মানুষ একটা ভুল করলে তাকে এতো চেপে ধরতে হবে কেন? তাকে সেভ করাই সংবাদকর্মীদের কাজ। অথচ তারা সেভ না করে এটা প্রকাশ করে দিচ্ছে। বিষয়টা খুবই আশ্চর্যজনক।
তিনি জানান, কালীগঞ্জ শহরের প্রিজম কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থী তিনি। ওই সময় তিনি পরীক্ষা দিয়ে ভাইভার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পরীক্ষার সময় লাইভ করেননি। ছোট একটি লাইভ করেছিলেন। এরপর সেটি ডিলিট করে দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সন্ধায় কেন্দ্রীয় কমিটির একটা চিঠি পেয়েছি। সেখানে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। এখন কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার জানান, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এটা করতে পারে না। তিনি বিষয়টি জেনেছেন। ইতিমধ্যে বাংলদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিকভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।