ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এখন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সেই সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা দুইবার টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছে হেলস বাটলাররা।
রোববার (১৩ নভেম্বর) মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করে পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ৬ বল আগেই জিতেছে ইংল্যান্ড।
এদিন টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। আগে বোলিং করার সুবিধা ভালোভাবেই কাজে লাগায় ইংলিশরা। ইনিংসের শুরুটা হয় বেন স্টোকসকে দিয়ে। প্রথম ডেলিভারি তিনি দেন ‘নো বল’। সেই মোমেন্টাম অবশ্য ধরতে পারেনি পাকিস্তান।
এরপর পাওয়ার প্লেতে পুরো সময়ই দাপট দেখায় ইংল্যান্ড। এর মধ্যে পঞ্চম ওভারে রিজওয়ানকে হারায় পাকিস্তান। স্যাম কারানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বলে ব্যাট চালিয়ে দেন রিজওয়ান। কিন্তু টাইমিং ঠিক ছিলো না তার। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। এক ছক্কায় ১৪ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন পাকিস্তান ওপেনার। ১ উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৯ রান তোলে পাকিস্তান।
পাওয়ার প্লের পর আরেকটি ধাক্কা খায় পাকিস্তান। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই মোহাম্মদ হারিসকে নিজের শিকার বানান আদিল রশিদ। ইংলিশ তারকার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারেন হারিস। কিন্তু ঠিকঠাক মারতে পারেননি। বল চলে যায় লং অনে। সেখানে থাকা বেন স্টোকস সেটা লুফে নেন। ১২ বলে ৮ করে ফেরেন হারিস।
মাঝে বাবর আজমের সঙ্গে আশা জাগান শান মাসুদ। কিন্তু এই জুটিও ভেঙে দিলেন রশিদ। ১২তম ওভারে পাকিস্তান অধিনায়ককে ফাঁদে ফেলেন তিনি। উইকেটে রান নিতে ভুগতে থাকা বাবর চেষ্টা করছিলেন ইনিংস মেরামতের। উইকেটে থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। আদিল রশিদ তাকে ইনিংস বড় করতে দিলেন না। ১২তম ওভারে মেডেন উইকেট নিয়ে পাকিস্তান তারকাকে বিদায় করেন তিনি। ২৮ বলে ৩২ রান করে সাজঘরের পথে হাঁটেন বাবর।
উইকেটে আসা ইফতেখার প্রথম ৫ বলেই রান নিতে ব্যর্থ হন। ষষ্ঠ বলে তিনিও উইকেট উপহার দেন। শূন্যতে তাকে বিদায় করে উৎসবে মাতেন স্টোকস। একের পর এক উইকেট হারিয়ে মেলবোর্নে শুধু হতাশাই দেখছিলো পাকিস্তান। এই হতাশার মাঝে আশার আলো হয়ে লড়াই করেন শান মাসুদ। জুটি গড়ার চেষ্টা করে দলকে পথ দেখান তিনি। কিন্তু আশাও মিলিয়ে দেন কারান। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে এসেই থামান শানকে। তরুণ পেসারের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন শান। সেখান থেকা লিয়াম ভুল করেননি ক্যাচ ধরতে। এরপর বাকি সময় আর রানে ফেরার পথ পায় পাকিস্তান। ফরে শেষ পর্যন্ত অল্প পুঁজি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাবরকে।
বল হাতে ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র ১২ রান খরচায় তিনটি উইকেট নেন স্যাম কারান। ২২ রান খরচায় দু’টি উইকেট নেন আদিল রশিদ। সমান দু’টি নেন ক্রিস জর্ডান। একটি নেন বেন স্টোকস।
১৩৮ রানের সহজ লক্ষ্য অবশ্য শুরুতে ইংলিশদের জন্য সোজা ছিলো না। প্রথম ওভারেই এক রান করা অ্যালেক্স হেলসকে বোল্ড করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। সাত রানেই হয় প্রথম উইকেটের পতন। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে মার খান নাসিম শাহ, দিয়ে ফেলেন ১৪ রান। হারিস রউফ চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে পান ২ চারে ১০ রান করা ফিল সল্টের উইকেট। মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিখার ক্যাচ ধরেন।
পাওয়ার প্লেতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৪৯ রান তুললেও হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। ষষ্ঠ ওভারে রউফের সুইংয়ে পরাস্ত হন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার অপেক্ষায় থাকা বাটলার। ১৭ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান করা ইংলিশ অধিনায়কের ব্যাটে লেগে বল রিজওয়ানের গ্লাভসবন্দি হয়। তাতে জমে ওঠে ফাইনাল।
চতুর্থ উইকেটে ধাক্কা সামাল দেন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুক। একাদশ ওভারে রান আউট থেকে রক্ষা পান ব্রুক। ফিল্ডারের বাজে থ্রোতে নেননি বিদায়। এরপর ব্রুক বেশিক্ষণ টেকেননি। এক চারে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। লং অফে দারুণ ক্যাচ নেন আফ্রিদি, ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। ক্যাচ নেয়ার সময় ডান পায়ে টান লাগায় আফ্রিদি মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।
১৪তম ওভারে রান আউটের হাত থেকে রক্ষা পান স্টোকস। নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে স্টোকস দৌড়ে রান নেয়ার চেষ্টা করেন। মঈন আলী আগ্রহী না হওয়ায় ফেরত যাওয়ার পথে স্টোকস পড়ে গিয়ে আবার উঠে দৌড়ান। ফিল্ডারের থ্রো এবারো স্টাম্পে লাগেনি। ১২ থেকে ১৪ এই তিন ওভারের মধ্যে ১০ রানের বেশি তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। ফলে শেষ ৩৬ বলে ৪৯ রানের জয়ের সমীকরণ ইংলিশদের সামনে এসে দাঁড়ায়।
পরে মাঠে ফিরে আফ্রিদি ১৬তম ওভারে বল হাতে নেন। একটি মাত্র বল করার পর পায়ে আবারো সমস্যা অনুভব করায় আর খেলতে পারেননি। তার ওভারের বাকি বলগুলো করেন ইফতেখার। ওই ওভারের পঞ্চম বলে চার ও শেষ বলে ছক্কা মারেন স্টোকস। তাতে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৪ বলে ২৮ রান।
মোহাম্মাদ ওয়াসিমের করা পরের ওভারের প্রথম দুই বল ও শেষ বলে চার মারেন মঈন। ওভারটিতে চলে আসে মোট ১৬ রান। তখন ইংলিশদের দরকার ১৮ বলে ১২ রান। হারিস রউফ ১৮ নম্বর ওভারে ৫ রান দেন। তাতে শেষ ১২ বলে প্রয়োজন পড়ে ৭ রান। মোহাম্মাদ ওয়াসিম ১৯তম ওভারে ইয়র্কার ডেলিভারিতে ১৩ বলে ৩ চারে ১৯ রান করা মঈনকে বোল্ড করেন। তাতে অবশ্য ফলাফল পাকিস্তানের অনুকূলে মোটেও আসেনি। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে এক রান নিয়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ৪৯ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকা স্টোকস।
পাকিস্তানের পক্ষে ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রউফ। একটি করে উইকেট পান আফ্রিদি, শাদাব ও ওয়াসিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৭/৮ (রিজওয়ান ১৫, বাবর ৩২, হারিস ৮, ইফতেখার ০, শান ৩৮, শাদাব ২০, নওয়াজ ৫, ওয়াসিম ৪, আফ্রিদি ৫, রউফ ১ ; কারান ৪-০-১২-৩, রশিদ ৪-১-২২-২, স্টোকস ৪-০-৩২-১, লিয়াম ১-০-১৬-০, জর্ডান ৪-০-২৭-২ , ওকস ৩-০-২৬-০)।
ইংল্যান্ড: ১৯ ওভারে ১৩৮/৫ (হেলস ১, বাটলার ২৬, সল্ট ১০, ব্রুক ২০, স্টোকস ৫২, মঈন ১৯, লিয়াম ১; আফ্রিদি ২.১-০-১৩-১, নাসিম ৪-০-৩০-০, রউফ ৪-০-২৩-২, ইফতেখার ০.৫-০-১৩-০, শাদাব ৪-০-২০-১, ওয়াসিম ৪-০-৩৮-১)।
ফল: ৫ উইকেটে জয়ী ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন: ইংল্যান্ড।