অমল তালুকদার, পাথরঘাটা(বরগুনা)থেকে:
বরগুনার পাথরঘাটায় মুক্তা (১৩) নামের ৭ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে লাইব্রেরীতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফয়সাল ও জুবায়ের নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এঘটনার পরে লজ্জায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
বিচারের দাবীতে রবিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাথরঘাটা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।
মানববন্ধন থেকে বলা হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার এবং যথাযথ দন্ড দেয়া না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
মহিলা পরিষদের পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি কানিজ ফাতিমা বীনা’র সভাপতিত্বে এখানে বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.জাবির হোসেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি এড.নূরুল ইসলাম,পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যাথাক্রমে জাকির হোসেন খান, অমল তালুকদার, ইমাম হোসেন নাহিদ, সফিকুল ইসলাম খোকন, প্রত্যয় এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকর্মী মেহেদী সিকদার, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণত সম্পাদক গোলাম মাওলা মিলন,মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ ফাতিমা বীনা এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনিরা ইয়াসমিন খুশীসহ অন্যান্য নতাকর্মীগন।
মুক্তার বাবা মো. মোস্তফা মেয়ের উপরে পাশবিক নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উল্লেখ্য,গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চরদুয়ানী বাজারের পূর্ব মাথায় মিনা লাইব্রেরী এন্ড কসমেটিকস এর দোকানের সার্টার বন্ধ করে এই ধর্ষন ও ভিডিও ধারনের ঘটনা ঘটে।পরে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
মুক্তা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঠালতলী গ্রামের মো. মোস্তফার মেয়ে ও চরদুয়ানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী।
অভিযুক্তরা হল একই উপজেলার উঃ কাঠালতলী এলাকার মো. বেল্লাল হোসেনের ছেলে ফয়সাল, ছহেরাবাদ এলাকার মোশারফ এর ছেলে জোবায়ের এবং তালুক চরদুয়ানী এলাকার মনির হোসেনের ছেলে ও লাইব্রেরী ব্যাবসায়ী সাকিবুল ইসলাম হৃদয়।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ৮ম শ্রেনির মাদ্রাসার ছাত্রী তন্নি তার বান্ধবী মুক্তাকে নিয়ে চরদুয়ানী বাজরের মিনা লাইব্রেরী এন্ড কসমেটিক্সের দোকানে কেনাকাটার জন্য যায়। এসময় মুক্তা ও তন্নির পূর্ব পরিচিত জুবাইয়ের ও তার বন্ধু ফয়সাল লাইব্রেরীতে ঢুকে এবং সাটার টেনে লাইব্রেরী বন্ধ করে দেয়। পরে দোকানদার শাকিব তাদের ৪জনকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। সেখানে জোবায়ের মুক্তাকে জোড় করে ধর্ষণ করে।সে ধর্ষনের ওই দ্শ্য ভিডিও করে রাখে। পরে আবার ফয়সাল গিয়ে পূনরায় তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি বেলা দেড়টার দিকে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। শাকিব আসার পরে স্থানীয়রা তাকে দোকান খুলতে বললে সে নানা টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে সে দোকান খুলতে বাধ্য হয়। এরপর ভিতরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মুক্তার মাস্ক খুলে বিভিন্ন মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় কিছু যুবক। পরে এই ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠক হবে স্থানীয়দের এমন স্বীদ্ধান্তে ওই দুই ছাত্রীকে তাদের অভিভাবক এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জানাজানি হলে লোকলজ্জার ভয়ে দ্বিতীয় দিন ২৮ জুন শুক্রবার বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুলছাত্রী মুক্তা আত্মহত্যা করে।
ঘটনাটি লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে আনতে চায়নি পরিবারের লোকজন। এমনকি তারা মুক্তার শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের কারো কাছেও জানায়নি বলে অভিযোগ করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান।
এদিকে মুক্তার বান্ধবী তন্নীর বাড়িতে বিষয়টি জানার জন্য সাংবাদিকরা গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মা হোসনেয়ারা বেগম জানান, তন্নী ও মুক্তা লাইব্রেরীতে যান। সেখানে জোবায়ের ও ফয়সাল নামর দুটি ছেলে ছিলো। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দোকানদার সাকিবুল ইসলাম হৃদয় দোকান বন্ধ করে দেন। দোকানের পিছনের রুমে জোবায়ের মুক্তাকে নিয়ে যান। এর পরে কি হয়েছে তা হোসনেয়ারা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মুক্তার মা বলেন, ওই দিন আমার মেয়ে বাড়ি থেকে সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে যায়। আমি জানতাম না এরকম ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের দিকে জানতে পেরেছি। বাড়ি এসে আমার মেয়ে আমার কাছে লাইব্রেরীতে অটকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখার বিষয়ে বলে গেছে। লোকলজ্জার ভয়ে আমরা কারো কাছে কিছুই বলিনি। এ লজ্জয় আমার মেয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি এর সুষ্ঠ বিচার চান।
অভিযুক্ত জোবায়েরের বাবা মোশারেফ হোসেন জানান, এরকম একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। যদি আমার ছেলে এরকমের কাজ করে থাকে তাহলে আমিও চাই তার উপযুক্ত বিচার হোক।
বিষয়টি প্রসঙ্গে পাথরঘাটা উপজেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুনিরা ইয়াসমিন খুশী বলেন,এমন একটি জঘন্য ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় আমরা হতবাক। আমরা ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবীতে আজ রবিবার পাথরঘাটায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। বিচার না হলে আরও কঠিন কর্মসূচি দিব এবং সেটি আপনাদের জানানো হবে।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন জানান, এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এর আগে কি ঘটেছিল তা কেউ পুলিশকে অবহিত করেনি। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এখন ঐ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের অভিযোগ করছে। ধর্ষণের বিষয়টি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে। এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
০৭/০৭/২০২৪