পাবনায় পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রকাশ্য দিবালোকে সাবেক এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম (৬৩)। তিনি ভবানীপুর গ্রামের মৃত হাছেনের ছেলে।
এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহতের ভাই মতি খন্দকার, একই এলাকার আরফান মোল্লার ছেলে আয়েনউদ্দিন ও নজিমউদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য তার ভাই মতিনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশের রেললাইনে বসে ছিলেন। এ সময় রেললাইনের দক্ষিণ পাশ থেকে শতাধিক লোকজন হাঁসুয়া, বল্লম, টেঁটা ও চাপাতিসহ অতর্কিত হামলা করে। তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহতের ছেলে যুবায়ের হোসেনের অভিযোগ, অবসর গ্রহণের পর এলাকার জুয়া খেলা ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
‘বাবার কাছ থেকে তারা নতুন বাড়ি করা বাবদ ১৫-২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাদের বাড়ির সামনে এলাকার কিছু মানুষ জুয়া খেলতো। বিষয়টি পুলিশকে জানালে আমার বাবাকে হত্যার হুমকি দেয়। গতকালও তারা মিটিং করে। এর আগেও কয়েকবার তারা হত্যার জন্য আক্রমণ করেছিল। সেই বিরোধের জেরেই সোমবার আশরাফ ও রবিউল মাস্টারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা একযোগে বাড়িতে ট্যাটা, বররা, হাঁসুয়াসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।’
এদিকে, নিহত জাহাঙ্গীর আলমকে নিজেদের কর্মী জানিয়ে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাবের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তাঁতীবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়াল খান।
তিনি বলেন, আব্দুল ওহাব কয়েক দিন আগে এলাকায় এসে বলেছেন, থানা-পুলিশ আমার আয়ত্তে। যা করা দরকার কর। তার ইন্ধনে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা দশ বার দিন আগে আব্দুল ওহাবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে আব্দুল ওহাবের নির্দেশে হামলা হয়েছে। তারা প্রায়শই জেলা পুলিশের সঙ্গে সখ্যতার কথা বলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আশা করি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুপক্ষই শাহীনুজ্জামান শাহীনের সমর্থক। নারীঘটিত একটি মামলায় তাদের পূর্ব বিরোধ ছিল। শাহীনের একতরফা ভূমিকায় অতিষ্ঠ হয়ে কিছু মানুষ আমার সহযোগিতা চায়। এই হত্যাকাণ্ডে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পুলিশকে প্রভাবিত করার অভিযোগও সত্য নয়।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে পূর্বশত্রুতার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। হামলায় জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন এবং মতি খন্দকারসহ অন্তত ১০ আহত হয়েছেন। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মতি খন্দকারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।