ঢাকার পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আজ রোববার সবচেয়ে বড় দরপতন দেখা গেলো।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে হারিয়েছে ১২৫ পয়েন্ট। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর তিন কর্মদিবসেই সূচক বাড়ে ৬৯৫ পয়েন্ট। দীর্ঘদিন পতনের বাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মধ্যে এদিনের বড় পতন ধাক্কা হয়েছে এসেছে বিনিয়োগকারীদের জন্য।
সরকার পতনের আগে ডিএসইর শেষ কার্যদিবসে ডিএসই সূচক ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। সাধারণ ছুটির শেষে লেনদেন শুরু হয় ৬ অগাস্ট। সেই থেকে ৫ দিনে সূচক বেড়েছে গত ১২ অগাস্ট পর্যন্ত; যাতে সূচক উঠেছিল সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৩২ পয়েন্টে।
এরপর থেকে দর সংশোধনে যায় ডিএসই। সবশেষ রোববার বড় পতনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে। এতে সূচক আবার ৬ হাজারের নিচে নেমে গেল।
দর সমন্বয়ে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেনও কমে হয় ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত ৯ কার্যদিবসে এটিই সবচেয়ে কম লেনদেনের ঘটনা।
গত ৬ ও ৭ অগাস্ট প্রথম দুই দিনে লেনেদেন সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে ওঠে। গত ৮ অগাস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর পরের দিনগুলোতে হাজার কোটির ঘরে লেনদেন হয়। মাঝে একদিন দেড় হাজার কোটি টাকার উপরে এবং একদিন দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন করে।
দর সমন্বয় শেষে বাজার আবার পতনের ধারায় যাওয়ার মধ্যে সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার লেনদেনে আসা বেশির ভাগ শেয়ার দর হারানোয় দিন শেষে প্রধান সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে। লেনদেনে অংশ নিয়ে ৩৬৬টি কোম্পানির দর হারানোর বিপরীতে বেড়েছে ১৮টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ১৪টির শেয়ার দর।
গত ১১ অগাস্টও এক পর্যায়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স পৌনে ৩০০ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও দিন শেষে ৯১ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন। সেদিন হাতবদল হয় ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার।
প্রথম চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার এ উচ্ছ্বাস পরের কর্মদিবস থেকেই ভাটা পড়তে থাকে। গ্রামীণফোন, রবি, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মত বড় মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে লাফ দেওয়ার কারণে সূচক বাড়লেও পরে এগুলোর দাম কিছুটা কমতে থাকলে সূচকও কমতে শুরু করে। পাশাপাশি অন্যসব কোম্পানির শেয়ারও কমে আগের অবস্থান বা কাছাকাছি নেমে এসেছে।
এরমধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুই কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের দরপতন থামছে না। কমছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের দরও।
শাইনপুকুর সিরামিকসের দর গত ৮ অগাস্ট ৩২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ক্রমাগত নামছে। সবশেষ রোববার লেনদেন হয়েছে ২৪ টাকা ২০ পয়সায়। গত ছয় কার্যদিবসে শেয়ার দর পতন হয় ৮ টাকা বা ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
একইভাবে শেয়ার দর কমেছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ডেরও। একই সময়ে ইউনিট দর ৭৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে সবশেষ লেনদেন হয় ৫৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ছয় দিনে প্রতি ইউনিটের দর কমেছে ১৭ টাকা বা ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ। আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদর ধরে রাখতে পেরেছে ফ্লোর প্রাইসের কারণে।
দিনের শুরুতে উত্থান দিয়ে শেয়ার হাতবদল শুরু হলেও সময় গড়াতে থাকলে দাম পড়ে যায় লেনদেনে আসা অন্য কোম্পানির শেয়ারদরও, যা চলে শেষ বেলা পর্যন্ত।
গত কয়েকদিনের দরপতন এবং সরকার পতনের পরের কয়েকদিনের একটানা বড় উত্থানকে ‘স্বাভাবিক’ লেনদেন মনে করছেন না ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম কয়েক দিন যেভাবে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল না। সরকার পতনের পরে অনেকে মনে করেছেন কিছু কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে। সেই ঝোঁকে কিনেছেন বেশি। এখন তা দর সংশোধনে গিয়েছে।”
তার ভাষ্য, ”নতুন সরকারের সময়ের বাজার কেমন যায় তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় তো লাগবে।’’
ডিএসইর প্রধান সূচকের সঙ্গে অন্য দুই সূচকও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। আগের দিনের চেয়ে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৪০ পয়েন্ট ও ডিএস৩০ সূচক ৫২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২৬ পয়েন্ট হয়।
এদিন ডিএসইতে দর বাড়ার শীর্ষে উঠে আসা কোম্পানির প্রথম তিনটি হল ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড লিমিটেড।
অন্যদিকে দর হারানোর শীর্ষে থাকা তিন কোম্পানি হল মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
সূত্র: বিডিনিউজ।