Thursday , 25 April 2024
শিরোনাম

পৃথিবীর গতি কমিয়ে দিয়েছে চীনের যে দানবীয় বাঁধ!

এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী চীনের ইয়াংৎজি। এই নদীর উপরেই গড়ে উঠেছে থ্রি গর্জেস বাঁধ। চীনের ইলিং জেলার সান্ডৌপিং শহরে এই বাঁধ অবস্থিত। জলধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে এই বাঁধ পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তবে থ্রি গর্জেস বাঁধ শুধু শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে নজির গড়েনি। পৃথিবীর আহ্নিক গতি পরিবর্তন থেকে শুরু করে পৃথিবীর আকৃতিতেও বদল আনে এই বাঁধ।

২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা জানান যে, থ্রি গর্জেস বাঁধের বিপুল জলরাশির চাপে পৃথিবী আগের চেয়ে কিছুটা ন্যুব্জ হয়ে গিয়েছে।

নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বাঁধের ফলে পৃথিবীর মাঝের অংশ সামান্য স্ফীত এবং দুই মেরু অঞ্চল চেপে গিয়েছে!

শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে থ্রি গর্জেস বাঁধের বিপুল জলরাশির চাপে। আগের চেয়ে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে গিয়েছে! এর ফলে বেড়ে গিয়েছে দিনের দৈর্ঘ্যও!

থ্রি গর্জেস বাঁধের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই সামান্য পরিবর্তন সাধারণ মানুষর নজরে পড়ে না।

থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। ৪০ হাজার কর্মী এই বাঁধ তৈরির কাজ করেছিলেন। বাঁধ তৈরিতে প্রায় ৩ কোটি ঘন মিটার কংক্রিটের ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৭ বছর ধরে তৈরি করা হয় থ্রি গর্জেস বাঁধ। তা-ও এর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি। পরে আলাদা করে জাহাজ তোলার জন্য ‘শিপ লিফ্ট’-সহ আরও নানা যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়।

থ্রি গর্জেস বাঁধটি তৈরি করতে ২৬ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের উচ্চতা ১৮০ মিটার।

থ্রি গর্জেস বাঁধ এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চাক্ষুষ করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন।

তবে, থ্রি গর্জেস বাঁধের ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক। ইয়াংৎজি নদী বর্ষায় ভয়ানক রূপ ধারণ করত। তার প্রকোপে চিনের বহু এলাকায় বন্যা দেখা দিত। চাষবাসের জমিরও ক্ষতি হত ব্যাপক।

প্রাথমিক ভাবে বন্যা রুখতে ইয়াংৎজি নদীর উপর বাঁধ তৈরির চিন্তাভাবনা করা হয়। বিপ্লব পূর্ববর্তী চিনের প্রেসিডেন্ট সান ইয়াৎ সেন সর্বপ্রথম এই বাঁধের পরিকল্পনা করেন। তার পর গৃহযুদ্ধ এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই বাঁধ নির্মাণের ঘটনা বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৪৪ সালে হেড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার জন এল সাভেজ জায়গা পরিদর্শন করে আসেন। ৫৪ জন স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণের জন্য আমেরিকাতেও পাঠানো হয়। এই ঘটনার কয়েক বছর পর চিনে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসে। ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাও জে দং থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরেও পাঁচ দশক পর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

তবে নির্মাণের পর যখন প্রথম বার থ্রি গর্জেস বাঁধ জলভর্তি করা হয়, তখন ওই জল বেরিয়ে চিনের দেড় হাজার শহর ভাসিয়ে দেয়। স্থানীয়েরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক স্তরেও পৌঁছে যায়।

পরে থ্রি গর্জেস বাঁধে কংক্রিট স্যুট, স্পিলওয়ে গেট-সহ নানা জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই বাঁধ নির্মাণের কাজ সহজ ছিল না। ৩২টি টারবাইনের এক একটি মোট ৭০০ মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম, এমন টারবাইন ব্যবহার করা হয় থ্রি গর্জেস বাঁধে। থ্রি গর্জেস বাঁধ চীনের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে ওঠার অন্যতম কারণও বটে।

Check Also

দুই ভাইয়ের হত্যাকান্ড মধ্যযোগীয় বর্রবরতাকেও হার মানিয়েছে- প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের মধুখালীতে সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সভায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x