দিনভর শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল গাজীপুরের টঙ্গী ও সাভারের আশুলিয়ার পোশাক কারখানা। বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুর, টঙ্গী ও সাভারের আশুলিয়াতে অন্তত ৪৬টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ, কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ-শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত কয়েক’শ শ্রমিক কয়েক ধাপে ১১টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান তারা।
এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা তাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। নিজ কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ভাঙচুর এড়াতে ওই কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চাকরিচ্যুত অন্তত দুই শ্রমিক আহত হন।
ছুটি ঘোষণা করা কারখানা গুলো হচ্ছে- টঙ্গীর বিসিক এলাকার লিমিটেড টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো এ্যাপারেল লিমিটেড, বেলিসিমা এ্যাপারেল্স লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি এ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড ও তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড।
অন্যদিকে আজ সকাল থেকে শ্রমিকরা আশুলিয়ার ডিইপিজেড এবং বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করেন ও বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এই অঞ্চলে। এ অবস্থায় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের ব্যারিকেড তুলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ও দর্জি ফেডারেশনের গাজীপুর জোলার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, কোনাবাড়ি বিসিকের সব কারখানা আজ ছুটি দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট কর্মীদের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িয়ে গেছে। গতকাল তাদের ১৩টি দাবি ছিল। সবার সামনে মালিকপক্ষ ১০টি দাবি মেনে নিয়েছিল। শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে আজ কাদের ইন্ধনে এই আন্দোলন।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, আজকের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে চাকরির দাবিতে। এছাড়াও পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগের দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি রয়েছে। আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কটি থেকে অবরোধ মুক্ত করতে পারলেও এখনো ব্যারিকেড রয়েছে ডিইপিজেড এর সামনে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের দুই পাশে অবস্থিত কারখানাগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ গতকাল সোমবার রাতেই ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে যৌথ অভিযান শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে অভিযান শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।