প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার করোনা মহামারি, বিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও দেশকে অনেক দেশের তুলনায় ভালভাবে পরিচালনা করছে এবং সেই কারণে আমরা অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, কয়েকদিন আগে ইত্তেফাক রিপোর্ট করেছে- যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ এখন কয়েক বেলায় খায় না। আমাদের দেশে স্রষ্টার কৃপায় সেই পরিস্থিতি এখনো হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসএমএস করে সবাইকে আরো কয়েক মাস আগে বলা হয়েছে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য। জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক মিনিটের জন্যও কখনো বিদ্যুৎ যায়নি। সেই জার্মানিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিদ্যুতের জন্য লোডশেডিং শুরু হয়েছে, রেশনিং করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে কখনো বিদ্যুৎ যেতো না, সেই অস্ট্রেলিয়াতে সিডনিসহ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে।
‘আর আমাদের দেশে পান থেকে চুন খসলে মির্জা ফখরুল সাহেব লাফ দিয়ে কথা বলেন, সাথে আবার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচয় দিতে যারা ভালোবাসেন তারা রাত ১২টার পরে টেলিভিশনের টকশো’তে পর্দা গরম করেন, কান ঝালাপালা হয়ে যায়’, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাদের বিশ্ব প্রেক্ষাপটটা দেখা প্রয়োজন।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তুরস্কে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩০ শতাংশ, ভারতে ৭-৮ শতাংশ, বাংলাদেশে আগে কম ছিল গত দু-এক মাস ধরে একটু বেশি হওয়াতে যেভাবে লেখালেখি, কথাবার্তা, এগুলোর দিকে আমি সাংবাদিকদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে অনুরোধ জানাবো। আর এই বিশ্ব প্রেক্ষাপট লেখা হলে পাঠক সঠিক তথ্য পাবে। অবশ্যই সরকারের ভুল থাকলে সেটি নিয়ে সমালোচনা হবে, সমালোচনাকে সমাদৃত করার মানসিকতা আমাদের আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই সংস্কৃতি লালন করেন।
ড. হাছান বলেন, আমাদের সবার সম্মিলিত লক্ষ্য হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন এঁকে দেশ রচনা করেছিলেন, আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন এঁকে, জীবন দিয়ে এই দেশ রচনা করে গেছেন, সেই স্বপ্নের ঠিকানায় দেশকে পৌঁছাবো। আর সেখানে পৌঁছাতে হলে ভুলত্রুটির সমালোচনা যেমন থাকতে হবে, ভালো কাজের প্রশংসাও থাকতে হবে। দু’টি না হলে দেশ এগুবে না, যারা ভালো কাজ করেন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেন তারা আশা হারিয়ে ফেলবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, রাষ্ট্রের আয়না হিসেবে কাজ করে, মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়। সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে এবং সততা ও নিষ্ঠা উৎসাহিত করতে প্রেস কাউন্সিল পদক চমৎকার ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সভাপতি ও কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিক এবং সংবাদপত্রের মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং পদক জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সাংবাদিকরা এখন অনেক মানসম্পন্ন রিপোর্ট করছেন। এই পদক তাদেরকে উৎসাহিত করবে।
প্রেস কাউন্সিল সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতায় বলেন, জাতির পিতা প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সাত বিভাগে দেওয়া পদকের মধ্যে এ বছর সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাংবাদিক ও দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক মরহুম বজলুর রহমানকে মরণোত্তর আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। প্রয়াতের পক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী সম্মাননা পদকটি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের হাত থেকে গ্রহণ করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিভাগে সম্মাননাপ্রাপ্ত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম এবং আঞ্চলিক প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননাপ্রাপ্ত খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের পক্ষে সম্পাদক মোহাম্মদ আলী পদক গ্রহণ করেন।
গ্রামীণ সাংবাদিকতায় দৈনিক ভোরের কাগজের সোনাগাজী প্রতিনিধি সৈয়দ মনির আহমেদ, উন্নয়ন সাংবাদিকতায় দ্য ঢাকা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার মো. শাহেদুল ইসলাম (শাহেদ শফিক), নারী সাংবাদিকতায় বিটিভির রিপোর্টার তুলনা আফরিন এবং ফটোসাংবাদিকতা বিভাগে দা নিউ এইজ এর স্টাফ ফটোগ্রাফার মো. সৌরভ লস্করের হাতে প্রেস কাউন্সিল পদক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ও অতিথিবৃন্দ।
২০১৮ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদকের আজীবন, প্রাতিষ্ঠানিক ও আঞ্চলিক প্রাতিষ্ঠানিক বিভাগে ১ লক্ষ টাকা এবং অপর চারটি বিভাগে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সম্মাননাও রয়েছে।