Wednesday , 24 April 2024
শিরোনাম

প্রবাস ফেরত স্বামীর ৫লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে, ৩জনের নামে মামলা

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ প্রতারণা করে প্রবাস ফেরত স্বামীর ৫লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এঘটনায় নিকাহ রেজিস্ট্রার ও স্ত্রীসহ ৩জনের নামে আদালতে মামলা করেছে প্রবাস ফেরত স্বামী কামরুজ্জামান। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে লালমনিরহাট অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

বাদী ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। তিনি লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে জীবন গড়তে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কামরুজ্জামান। কাজ শেষে দেশে ফিরে গত ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি একই উপজেলার সারপুকুর মসুর দৈলজোর গ্রামের আব্দুর রউফের মেয়ে কলেজ পড়ুয়া আলেমা খাতুনকে বিয়ে করেন। স্বপ্ন পূরণে স্ত্রীকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও বিএড শেষ করান। এরই মাঝে তাদের সংসারে আব্দুল্লাহ বিন জামান নামে এক পত্র সন্তানের জন্ম হয়। লালমনিরহাট নেছারীয়া মাদরাসার ইবতেদায়ী শাখার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিও নিয়ে দেন স্ত্রীকে। কিন্তু চাকরির পরে পাল্টে যায় স্ত্রী আলেমা খাতুনের আচরণ।

নিজের নামে বাড়ি, গাড়ি ও জমি রেজিস্ট্রির দাবি জানান। বৃদ্ধা শাশুড়িকে বাড়ি থেকে সড়াতে বলেন। কিন্তু স্বামী কামরুজ্জামান মাকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় কোলের সন্তান ফেলে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে তালাক দেন আলেমা খাতুন। এরপর একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে বড় একা হয়ে পড়েন প্রবাসী কামরুজ্জামান। পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন।

এদিকে স্বামী ছেড়ে দেড় বছর কর্ম স্থল মাদরাসার পাশে বাসা ভাড়া থেকে চাকরি চালিয়ে যান সহকারী শিক্ষক আলেমা খাতুন। এরপর নতুন কৌশল শুরু করেন। পুনরায় কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ের প্রলোভন দেন। পাঁচ বছরের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আলেমার প্রতারণার ফাঁদে পা দেন প্রবাস ফেরত কামরুজ্জামান।

গত ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট আলেমা খাতুন তার মাদরাসার শিক্ষক ও নিকট আত্মীয় সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্টার কাজী ফয়সাল আহমেদের বাসায় কামরুজ্জামানকে ডেকে নেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে নতুন করে বিবাহ রেজিস্ট্রি বহিতে এবং একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন তারা। এরপর ওই নিকাহ রেজিস্টারের বাসাতেই ছেলে সন্তানকে নিয়ে মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়া থাকা শুরু করেন তারা।

এরপর ভালোবাসা দেখিয়ে স্বামীর কাছে পুনরায় গহনা কিনে নেন আলেমা খাতুন। এক পর্যায়ে কৌশলে স্বামী কামরুজ্জামানকে ব্যাংকে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা নেয় স্ত্রী। এর তিন মাস পরে সুযোগ বুঝে আবারও ছেলেকে গ্রামে দাদার বাড়ি পাঠিয়ে ভাড়া বাসার সব আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়ে যান আলেমা খাতুন। পরে সাথে দেখা করতে গেলে স্বামীকে গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেয় স্ত্রী। পরে খোঁজ খবর নিয়ে স্বামী কামরুজ্জমান জানতে পারেন, পুনরায় করা বিয়ের তালাক না দিয়েই লালমনিরহাট পূবালি ব্যাংকের কর্মচারী রেজাউল ইসলামকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন তার স্ত্রী আলেমা খাতুন।

এদিকে দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা উঠাতে গেলে নিকাহ রেজিস্টার কাজী ফয়সাল এফিডেভিটের ফটোকপি দিয়ে বিদায় করেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন টাকা হাতিয়ে নিতে নিকাহ রেজিস্টার ফয়সাল, ব্যাংকের কর্মচারী রেজাউলসহ তার স্ত্রী আলেমা পরিকল্পনা করে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

অবশেষে নিঃস্ব প্রবাস ফেরত কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে লালমনিরহাট অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২’ এ ওই শিক্ষিকা আলেমা খাতুন, সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার ফয়সাল আহম্মেদ ও রুপালী ব্যাংক কর্মচারী রেজাউলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদিতমারী থানা পুলিশকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

লালমনিরহাট মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুমাইনুল ইসলাম রিপন জানান, আদালত বাদীর আবেদন গ্রহন করে তদন্ত করতে আদিতমারী থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

Check Also

কয়রায় নীতি সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধান কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ খুলনার কয়রায় ইউনিয়ন পরিষদ জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা ভিত্তিক (সিএসও) নেটওয়ার্ক সদস্যদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x