আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী):- রাজশাহীর তানোর উপজেলার কাঁমারগাঁ ইউপির হাতিশাইল গ্রামের কছির উদ্দিনের স্ত্রী তোহামিনা বেগম (৫৫)। তোহামিনার বৃদ্ধ স্বামী নানা রোগে আক্রন্ত। চিকিৎসা খরচ জোগার করাই কষ্ট সাধ্য।
উপজেলার হাতিশাইল মৌজায় মাত্র ২৫ শতক তিন ফসলি জমি তার শেষ সম্বল। অভাব অনটনের সংসারে ২৫ শতক জমিতে যেটুকু ধান পান, সেটি দিয়েই চলতো সারা বছর।
চলতি মৌসুমে বোরো চাষ করার জন্য তিনি বীজতলা করেছেন ১৫ দিন আগে। বীজতলা করলেও তোহামিনা বেগম তার ২৫ শতক জমিতে আর বোরো চাষ করা হচ্ছেনা।কারণ তার বীজতলার জমি উপর দিয়ে হাতিশাইল গ্রামে আব্দুল মান্নান এবং তার ছেলে মিদুলসহ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় ৪০ বিঘা ফসলী জমি নষ্ট করে কখনো দিনে অথবা রাতে আধারে চারটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষকের নিজস্ব জমি জোর করে পুকুর খনন শুরু করেছেন।
বীজতলা করেও বোরো চাষ না করতে পারার গল্প শুধু তোহামিনা বেগমের একাই নয়, হাতিশাইল, কামারগাঁ এবং সুমাসপুর গ্রামে প্রায় ৩০ জন কৃষকের বীজতলা নষ্ট করে ফসলী জমি জোর করে পুকুর খনন শুরু করেছেন প্রভাবশালীরা।
প্রভাবশালীদের সাথে না পেরে তাদের ফসলী জমিতে পুকুর খনন বন্ধ এবং তা রক্ষায় এলাকার প্রায় ৪৬ জন কৃষক স্বাক্ষর করে গত ১৯ ডিসেম্বর তানোর থানা, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকালে সজেমিন গিয়ে দেখা যায়, হাতিশাইল মৌজায় যেখানে পুকুর খনন হচ্ছে তার মাঝখানে কম পক্ষে পাঁচজন কৃষকের বোরো বীজতলায় চারা রয়েছে। আর যেখানে পুকুরের মাটি দিয়ে পাহাড় করা হচ্ছে তার আসপাশে কম পক্ষে অর্ধশত কৃষক বীজতলা করে বোরো চাষের প্রস্ততি নিচ্ছে।
সেখানে পুকুর খনন করলে শুধু অর্ধশত কৃষকের জমিই যে ক্ষতি হচ্ছে তাও নয়, এ পুকুরের পাড়ের জন্য এ মৌজার প্রায় ৬০০ বিঘা ফসল পানির নিজে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে।
সেখানে সংবাদকর্মী এসেছে শুনে জড়ো হতে থাকেন আসপাশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কৃষক। তারা সবাই তাদের ফসলী জমি রক্ষায় আকতি জানান সংবাদকর্মীর কাছে।
জড়ো হওয়া কৃষকের মধ্যে হাতিশাইল গ্রামের জামাল, গিয়াস ও রেজাউল এবং সমাসপুর গ্রামে শ্রী অনিল চন্দ বিশ্বাস সহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়।
তারা বলেন, প্রভাবশালী আব্দুল মান্নান তার ছেলে মিদুলসহ জোর করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন তাদের জমিতে। বাধা দিতে গেলে তারা বলেন পুকুর খনন হচ্ছে ফসলে বদলে আপনাদের লিজ হিসাবে টাকা দেয়া হবে। কৃষকেরা তা মানতে রাজি হয়নি। তবুও তারা জোর করে খনন অবহ্যত রেখেছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন কৃষক এবং অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের পুকুর খনন না করতে নোটিস প্রদান করেছেন। এবং আগামী ৫ জানুয়ারী সবাইকে শোনানীতে থাকার কথা বলেছেন। কিন্ত অভিযুক্তরা শোনানীর আগে পুকুর খনন করতে গভীর রাতে আধারে একাধিক ড্রেজার মেশিন এনে পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে যে প্রকাশে কাজ করছেন তিনি আব্দুল মান্নানের ছেলে মিদুল তার সাথে রবিবার মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, তার নিজের নামে সেখানে ৫ বিঘা জমি আছে আর সেখানে আরো ২০ বিঘা জমি কৃষকের কাছে লিজ নিয়ে পুকুর খনন করছেন।
তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে কৃষকদের অভিযোগের প্রক্ষিতে সেখানে এক সপ্তহ আগে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের যাওয়ার সংবাদ পেয়ে অভিযুক্তরা ড্রেজার মেশিন রেখেই পালিয়ে যাই। পুলিশ ঘটনা স্থল হতে ড্রেজার মেশিনের দুইটি ব্যাটারী উদ্ধার করে থানা আনেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ চন্দ্রঁ দেবনাথ বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে পারবেনা কেউ। কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের নোটি পাঠানো হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারী শোনানীর দিন ধায্য আছে।