ফুলবাড়ীতে চলাচলের দূর্ভোগই চরাঞ্চল বাসীর ভাগ্য উন্নয়নে বড় বাঁধা
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম :
বাদল দিনে কাঁদা আর শুষ্ক মৌসুমে ধূলাবালির খেলা। এ দুইয়ে মিলে তাদের জীবন বিপর্যস্ত। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকলে কোনোদিক থেকে উন্নতি ধরা দেয় না। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর জেগে ওঠা বিশাল চর এলাকা। সেখানে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট দুই জেলার ৪ টি ইউনিয়নের ৭/৮ টি গ্রাম রয়েছে। সেখানে প্রায় ৪/৫ হাজার মানুষের বসবাস। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে যায় তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন।
বুধবার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাংগা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি রাস্তাই অনেক ভাঙ্গাচোরা। কোথাও কোথাও অনেক বড় বড় গর্ত পড়ে গেছে। যাত্রীবাহী কোন যান ঐসব এলাকার ভাড়ার নাম শুনলেই আঁতকে উঠে। এজন্য যাতায়াত ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বাসীর যেন এক দুর্বিষহ জীবন যাপন। আনন্দবাজার থেকে ইন্তুর ঘাটের রাস্তাটি একদম চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তাঘাটের এতটাই বেহাল অবস্থা যে, পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই এখন আর কোনো প্রকার যান চলাচল করে না। অথচ ওই রাস্তাটি দিয়েই তাদের আসতে হয় ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ হাট-বাজার। প্রায় ২/৩ হাজার মানুষের অতি প্রয়োজনীয় একটি রাস্তা এটি। চর এলাকা গুলোতে কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারবে না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার কোনো উপায় নেই। এক কথায় অসুস্থ রোগীকে কাঁধে করে আনন্দবাজারে নিয়ে এসে তারপর গাড়িতে তুলতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি ক্ষেত্রে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। পথঘাট ভালো না থাকায় এখানকার উৎপাদিত ফসল ধান,গম, পাট, ভুট্টা, সরিষা ইত্যাদি বিক্রি করতে লোকসান গুনতে হয়। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও এ এলাকাগুলো থেকে কিছু কিনতে চায় না। বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করে। এভাবে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের।
সেখানে কোনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় নির্ভর করতে হয় পশ্চিম ফুলমতি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, নাওডাংগা ডিএস দাখিল মাদ্রাসা, নাওডাংগা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বালারহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হলে এই রাস্তাটিই ব্যবহার করতে হবে। বিকল্প অন্য রাস্তা ব্যবহার করলে দুই গুণ দুরত্ব বৃদ্ধি পায়। সহজ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তারা প্রতিনিয়ত কষ্ট করে ডাবল দুরত্ব ঘুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করে। এই দুর্ভোগের ফলে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে নেমে পড়ে মাঠের কাজে। মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কোনোরকমে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করলেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কোমল বয়সেই কাঁধে চেপে বসে সংসারের বোঝা। তাই সরকারের কাছে চরাঞ্চলের পথঘাট চলাচলের উপযোগী করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দেয়ার আকুল আবেদন জানান চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।