চট্টগ্রামে ফ্রিল্যান্সারের সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বরখাস্তের এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন–গোয়েন্দা শাখা উত্তর-দক্ষিণ (ডিবি) পরিদর্শক রুহুল আমিন, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. বাবুল মিয়া, এএসআই মো. শাহ পরাণ জান্নাত, এএসআই মাইনুল হোসেন, মো. জাহিদুর রহমান, মো. আব্দুর রহমান।
এ ঘটনায় গত ২ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় কাউন্টার টেরোরিজম শাখার এডিসি আসিফ মহিউদ্দিনকে। অপর দুই সদস্য ডিবির এডিসি শেখ শাব্বির ও ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার এডিসি (পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মুকুর চাকমা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে গত ১ মার্চ সিএমপি খুলশী থানাধীন ২নং গেটস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার অফিসের সামনে থেকে কাউসার আহম্মদকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কাউসার আহম্মদ আবু বক্করের অ্যাকাউন্ট থেকে বিটকয়েনসমূহ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
জব্দকৃত মোবাইলের বিন্যান্স অ্যাপসে আসামি কাউসার আহম্মদের ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টে ২,০৮,৩৮০.৩৩ ইউএসডি ক্রিপ্টোকারেন্সি পাওয়া যায়। কাউসার আহম্মদ জানায়, আবু বক্কর ছিদ্দিক তার পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাধে আসামির অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন সম্পর্কে সে অবগত ছিল।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবু বক্কর ছিদ্দিক অনলাইন জুয়ার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় কাউসার আহম্মদ ও তার সহযোগী শাহাদাত হোসেন (৩৫) আবু বক্কর ছিদ্দিকের উপরোক্ত বিন্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৪.৯৭৩৭৯২২১ বিটিসি বিটকয়েন সরিয়ে নিয়ে যায়। এই বিটকয়েনসমূহ প্রথমে শাহাদাত হোসেনের অ্যাকাউন্টে যায় বলে কাউসার আহম্মদ প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। পরবর্তীতে শাহাদাত হোসেন বিটকয়েন সমূহকে ইউএসডিটিতে রূপান্তর করে কাউসার আহম্মদের অ্যাকাউন্টে দুই লাখ আট হাজার ৩৮০ ইউএসডিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি স্থানান্তর করে বলে জানায়।
এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর/দক্ষিণ) বিভাগের টিম ২১ এর সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন গুলবাগ আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক (৩৮) ও মো. ফয়জুল আমিন নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আসামিরা অনলাইনে জুয়া খেলার কথা স্বীকার করলে পরের দিন সিএমপি অধ্যাদেশে জুয়া খেলার প্রসিকিউশনসহ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আসামিরা ওইদিনই আদালত হতে ছাড়া পায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যম হতে জানা যায় আবু বক্কর ছিদ্দিক মোবাইলে জুয়া খেলা পরিচালনার পাশাপাশি বিন্যান্স অ্যাপসের মাধ্যমে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন করতো। উক্ত বিন্যান্স অ্যাপসে থাকা আবু বক্করের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪.৯৭৩৭৯২২১ বিটিসি বিটকয়েন কে বা কারা সরিয়ে নিয়ে যায়।
গোপন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, আবু বক্কর ছিদ্দিকের পূর্ব পরিচিত মো. কাউসার আহম্মদ (৩৫) এবং মো. শাহাদাত হোসেন (৩৫) নামীয় দুই ব্যক্তি বিন্যান্স অ্যাপস থেকে উপরোক্ত বিটকয়েন সমূহ সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। তারা তিনজনই দীর্ঘদিন যাবত ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন করে আসার তথ্য পাওয়া যায়।