১২ ই জুলাই, ২০২৪, শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৭২ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
সেমিনারে গেস্ট অব অনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জেবুননেসা।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা ও নারী নেত্রী মিসেস হাসিনা সুলতানা ও পারভীন আক্তার।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু, মেহেরাজ হোসেন ও লায়লা সুলতানা।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কলিমউল্লাহ বলেন,
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ মাসুদুল হক চৌধুরী বলেন,
১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই তৎকালীন রেসকোর্স ময়াদানে বঙ্গবন্ধু তার আবেঘন এবং জাতি সত্বার বিকাশের দিকনির্দেশনা মুলক ভাষন দিয়েছিলেন যা আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। সেই ভাষনে তিনি যেমন আমাদের রাষ্টের মূল নীতি কি হবে তার উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রনীতি ও বিশ্ব শান্তির একটি রুপ রেখা তুলে ধরেণ। একই সাথে তিনি নিজের আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে বালেন * আমি মানুষ, আমি বাঙ্গালী , আমি মুসলমান – একবার মরে দুইবার মরে না * তার উক্তিতে ই তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা কে সঙ্গায়িত করেছেন যে প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবেন । একটি মহল যার অপব্যখ্যা দিয়েই যাচ্ছে । ১৯৭২ সালের ১২ ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যাবস্থা থেকে পার্লামেন্টারী ব্যাবস্থা প্রবর্তন করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেণ। এর আগে দিল্লীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আগামী দু মাসের মধ্য ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ফয়সালা করে আসেন ” তিনি বলেন ১৭ ই মার্চ আমার জন্মদিন আমি চাই সেদিন আপনি বাংলাদেশে আসবেন আমার জনগন আপনাকে বরণ করবে তার আগেই আপনার সেনারা বাংলাদেশের ভুখন্ড ত্যাগ করুক ” শ্রীমতী গান্ধীর এক কথার উত্তর – আপনি যা চাইবেন তাই হবে । হয়েছিল ও তাই। কত বড় দূরদর্শী নেতা হলে দেশে আসার আগেই দেশকে বিদেশী সেনা মুক্ত কারার কথা চিন্তা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দ্বিতীয় ঘটনা নেই বিজয়ের তিন মাসের আগে ই বিজয়ী সেনার এত দ্রুত নিজদেশে চলে যায়। যা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধুর জন্য।
বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র জমা দিয়ে নিজ নিজ কাজে ফিরে গিয়ে ধবংশপ্রাপ্ত দেশ গড়তে বলেন। যে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ছাত্র জনতা শ্রমিক কৃষক অস্ত্র হাতে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সারা দেশে সেই মুক্তিযোদ্ধারদল নিজ নিজ কমান্ডারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পদতলে অস্ত্র সমর্পন করে তার অনেক ভিডিও ফুটেজ এখন দেখা যাচ্ছে। মুজিব বাহিনীর পক্ষে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আ স ম আব্দুর রব সহ সবাই ঢাকা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্ত্র জমাদে।। টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনী র এক ব্রিগেড সদস্য অস্ত্র সমর্পন করেন। ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা রা অস্ত্র সমর্পন করেন। বঙ্গবন্ধু সকল মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে একটি শোষণ মুক্ত সমাজ ব্যাবস্থা গড়ার লক্ষে তিনি তাকে সাহায্য করতে পুরো দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ঢাকা মেডিকেল কলেজে আলাদা মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল করেন । গুরুতর আহত শমসের মবিন সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য৷ বিদ্ধস্ত দেশে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ভাবে তালিকা প্রনয়ণ ও সংগঠিত করার জন্য * দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ” প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুক্তযোদ্ধাদের কল্যানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করেন। পাকিস্তানি নাগরিকদের পরিত্যক্ত শিল্পকারখানা , ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সহ হাজার কোটি টাকার সম্পদ এই ট্রাষ্টের আওয়াতায় দেয়া হয়, গুলিস্তান ভবন, তবানি ভ্যবারেজ, সিরকো সোপ, ইতাদী সহ বেশ কয়েকটি জুট মিল ও অন্যান্য কারখানা বানিজ্যিক ভবন ছিল।
এসব লাভ জনক প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও কর্ম সংস্থান হবে ।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আস্তে এই দুইটি সংস্থা কে দূর্বল করা হয় এবং কল্যাণ ট্রাষ্টের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেস্য করণের নামে ৭৫ পরবর্তী সরকার গুলো লুটপাট করে নেয়। না না ভাবে জাতীয় প্রতিষ্ঠান মুক্তযোদ্ধা সংসদকে অকার্যকর করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধ্য কাঊন্সিল ও আমলা নির্ভর মন্ত্রনালয় করে আজ সত্যিকার মুক্তযোদ্ধাদের অপমানিত করা হচ্ছে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম ও হয় নি বা যারা পাকিস্তানে ছিল অথবা যারা যুদ্ধের সাথে কোন ভাবে সম্পিক্ত ছিল না তারাও ভাতা নিচ্ছে। আর প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা ৭৫ এর পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধীদের উদাসীনতায় হারিয়ে গেছে এবং জামুকা মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপের না নেয়ার কারনে তালিকার বাইরে আছেন। এ ব্যাপারে সরকারে কার্যকর পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গায়িত প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা হউক। মুক্তিযোদ্ধাদের কোন দল নেই তাদের পরিচয় তারা মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র একথা ই হউক জাতির আদর্শ।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য পিএইচডি গবেষক জনাব রণজিৎ মল্লিক সেমিনারের সভাপতি প্রফেসর ড নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু যে একজন অত্যন্ত সংবেন্দনশীল মানুষ ছিলেন সে বিষয়টি একটু মনযোগ দিয়ে তাকালেই চোখে পড়ে। এই সংবেদনশীলতা তার জীবনের সর্বত্র প্রকাশিত। এর কারন বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান। রাজনৈতিক য়ান্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনার সময়েও তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগের কথাটি সব সময় মাথায় রেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চে তার কর্তৃক পরিচালিত ওইতিহাসিক অসযোগ আন্দোলনকালীন সময়ে জন দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে তিনি তার সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন, তিনি তার ঐক্যবদ্ধ জনগণকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পরে যখন সেই নবীন রাষ্ট্রের শাসনভার কাধে তুলে নিয়েছেন, দেশকে নানান ভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তখনো তিনি তার বিরোধীতাকারীদের প্রতি রূঢ় আচরণ করেননি। যারা দেশ ও জাতির শত্রু তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন এই আশায় যে তারা হয়তো একদিন শোধরাবে। বঙ্গবন্ধুর এই সংবেদনশীলতা আসলে তার জাতীয়তাবাদের অনুসঙ্গী, কেননা বাঙালী জাতীয়তাবাদ ছিল মূলত প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের বিপরীতে এক মানবীয় ও সংবেদনশীল জাতীয়তাবাদ।
জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শাকিব হোসেন বলেন , ১২ জুলাই ১৯৭৩ সালের আজকের এই দিনে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগ ও পরামর্শে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল । গণহত্যা ,মানবতাবিরোধী অপরাধ ,যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য রাষ্ট্রকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়ায় ছিল এ বিলের লক্ষ্য ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিহজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।