ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকির সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন রক্ষার স্বার্থে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। আজ বিশ্বব্যাংকের একটি নতুন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন, ‘বাংলাদেশ: পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে উপকূলীয় স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে দেশের অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরে এবং এর উপকূলীয় অঞ্চলের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার জন্য আরও পদক্ষেপের সুপারিশ করে।’
এটি ঝুঁকির চালকদের বিশ্লেষণ করে, কীভাবে সরকার এই ঝুঁকিগুলো হ্রাস করেছে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্ভাবনী সমাধান প্রস্তাব করে।
জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং স্থিতিস্থাপকতায় সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগের জন্য পরিচিত।
এটি দেখায় কীভাবে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ জীবন বাঁচায়। অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাস করে এবং উন্নয়ন লাভ রক্ষা করে।
এটি সম্ভব হয়েছে একটি কৌশলগত নীতি কাঠামোর দ্বারা সমর্থিত বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে। তৃণমূল-স্তরের অভিযোজন এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা অবকাঠামোতে কাঠামোগত বিনিয়োগ পর্যন্ত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়জনিত প্রাণহানির সংখ্যা ১০০ গুণ কমিয়েছে।
যাই হোক, দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, পরিবেশগত অবক্ষয় এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকি উপকূলীয় অঞ্চলে বিদ্যমান প্রাকৃতিক এবং অবকাঠামো ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করছে যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষের আবাসস্থল।
স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে বাংলাদেশকে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ এবং ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান্ডান চেন বলেছেন ‘উপকূলীয় স্থিতিস্থাপকতা একটি স্থির লক্ষ্য নয় যা পূরণ করার জন্য বরং পরিবর্তনশীল অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুঁজে পাওয়ার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া।’
চেন আরো বলেন ‘গত পঞ্চাশ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। আজ দেশটি দুর্যোগের প্রস্তুতি এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার ক্ষেত্রে মূল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এবং অন্যান্য জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা।’
প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে উপকূলীয় স্থিতিস্থাপকতায় আরও বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুবিধার একটি বিন্যাস তৈরি করবে।
এটি উপকূলীয় অঞ্চলের স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য সাতটি মূল সুপারিশ তুলে ধরে। যার মধ্যে অপারেশন শক্তিশালীকরণ এবং অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ; স্থানীয় জ্ঞান স্বীকৃতি; এবং অত্যাধুনিক মডেলিং টুলস ব্যবহার করা। পরিবর্তিত জলবায়ু এবং গতিশীল উপকূলীয় প্রক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো অভিযোজিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দেশক নীতি হিসাবে কাজ করা উচিত।
অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের সাথে পরিপূরক হওয়া দরকার। উপকূলীয় এলাকা টেকসই স্থিতিস্থাপকতার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং জীবিকা অভিযোজন থেকে উপকৃত হতে পারে। অবশেষে, একটি সমন্বিত কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যা ঝুঁকি হ্রাসের বাইরে যায় এবং এর মূলে বৃদ্ধি, মঙ্গল এবং টেকসই উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত করে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ডিজাস্টার রিস্ক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক স্বর্ণা কাজী বলেছেন ‘উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা অতীতের হস্তক্ষেপগুলো থেকে শিখতে পারি এবং উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পেতে পারি। এই প্রতিবেদনটি ১৯৬০ এর দশক থেকে সমস্ত বড় বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর একটি প্রথম ধরনের বিশ্লেষণ প্রদান করে’।
১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উপকূলীয় এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি তৈরিতে সহায়তা করছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রথম পাঁচটি বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের মধ্যে ছিল প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় ভোলার পর উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নতির জন্য সহায়তা।
বর্তমানে ১.৯ বিলিয়ন ডলারের চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, আবহাওয়া পরিষেবা এবং বনায়নের মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।বাসস