পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছেন, বেহেশতে আছেন। তবুও জিনিসপত্রের দাম যাতে আর না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখছে সরকার।
শুক্রবার সকালে সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি বিষয়ক এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
সকালে দুই দিনের সফরে সিলেট আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকে বসেন তিনি।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
শুরুতেই সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিডিয়াতে দেখলাম যে সুইজারল্যান্ড রাষ্ট্রদূত বলেছেন- বাংলাদেশের সরকার সুইজারল্যান্ডে টাকা পাচারকারীদের তথ্য চায়নি; কিন্তু আমি জানি যখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা আছে বলে যখন খবর পাওয়া গেল তখনই বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য চেয়ে তাদের চিঠি দিয়েছে। তারপর তারা নাম নির্দিষ্ট করে তথ্য চাওয়ার আহবান জানান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে তথ্য চায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা শুধু একজনের তথ্য দেন। তারপরও বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে কিন্তু তারা দেয়নি। তা সত্ত্বেও তাদের রাষ্ট্রদূত কিভাবে বলে বাংলাদেশ তথ্য চাইনি। তিনি হয়তো নতুন যোগ দিয়েছেন তাই তার এসব বিষয় জানা নেই। তিনি জানেন না, না জেনে একখানা বলে ফেলেছেন; তারপরই মিডিয়া এটা নিয়ে হইচই শুরু করেছে।
মন্ত্রী বলেন, গভর্নর ও অর্থ সচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা আমাকে সব কাগজপত্র পাঠিয়েছেন, কবে কখন তথ্য চাওয়া হয়েছে সব বিষয় আমাকে জানিয়েছেন। এছাড়া উচ্চ আদালত যেহেতু বিষয়টি জানতে চেয়েছেন তাই তারা আদালতের জন্যই কাগজপত্র তৈরি করছেন।
মন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র, কিন্তু এভাবে তথ্যের বিভ্রাট করা ঠিক না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু সুইজারল্যান্ড নয় যারা বাংলাদেশকে অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন সেসব দেশেও পাচার হয় কিন্তু তারাও সহজে তথ্য দিতে চায় না। এটা তাদের মজ্জাগত সমস্যা।
এরপর বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বেই মন্দার ভাব আসছে; তা একাধিক কারণে। এক হলো করোনা মহামারির কারণে অন্যটি হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সেই কারণে সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়েছে। সেটা বিশ্বের অনেক দেশেই পড়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।
তিনি বলেন, গত বছর জিডিপির গ্রোথ হয়েছে ৬.৯ শতাংশ। এ সময় তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন- কোথায় মন্দা পেলেন?
তিনি বলেন, এখনো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কম। আমেরিকায় ৯ এর উপরে, অন্যান্য দেশে আরও অনেক বেশি, তুরস্কে প্রায় ৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে, ইংল্যান্ডে লোকজন কষ্টে আছে, পাকিস্তানে ৩৭ শতাংশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনা করলে বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছে, বেহেশতে আছে বলতে হবে। তবে হ্যাঁ, আমাদেরও চ্যালেঞ্জ আছে, আমরা এসব চ্যালেঞ্জ যাতে মোকাবিলা করতে পারি তাই আগে-ভাগেই সাশ্রয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।