সারাবিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বাংলাদেশে নির্মাণাধীন সবচেয়ে বড় প্রকল্প পাবনার ঈশ্বরদীস্থ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয়রা এর আঁচ লাগাতে চান না। বাংলাদেশে থেকে এমন পরিস্থিতি তাদের হৃদয় ভেঙে দিলেও রাশিয়ানদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই চলছে ইউক্রেনীয়রা।
রূপপুরে কর্মরত শ্রমিক, দোকান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আগের মতোই একসঙ্গে চলাফেরা করছেন। একই সঙ্গে শপিং করছেন, বাজার করছেন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করছেন। তবে তাদের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। স্থানীয় দোভাষীদের কাছে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তার কথাও জানিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয়রা।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কর্মরত ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ানদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, এখনও পর্যন্ত রাশিয়ান ও ইউক্রেরিয়ানরা আগের মতেই একে অপরের সাথে বন্ধুর মতো কাজ করছেন। যুদ্ধের প্রভাব তাদের মধ্যে লক্ষ করা যায়নি। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তা-উদ্বেগ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিজেদের মধ্যে কোন ধরনের মনোমালিন্য যেন না হয় সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে রূপপুর প্রকল্পের ভেতর রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ান নাগরিকদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুদ্ধের প্রভাব তাদের ওপরও পড়তে পারে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় বেলারুশিয়ানদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে রূপপুরে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রসাটম।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাশিয়ান এই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং কাজের শিডিউলে কোনো বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।’
রোসাটম জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণে অচলাবস্থার আশঙ্কা নেই। এই ইস্যুতে রূপপুর প্রকল্পে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৩ সালেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর কথা রয়েছে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুরে। খরচ হচ্ছে প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
Tweet