বাংলাদেশ আজ জাপানকে এদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিশেষ করে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ৫ম জাপান-বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং জাপান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (এমইটিআই) আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-মন্ত্রী হিরাই হিরোহাইড। পালাক্রমে এই অর্থনৈতিক সংলাপের আয়োজক দেশ ছিল জাপান । তবে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সংলাপটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ও জাপান উভয়েই বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন এবং জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) মডেলের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। জাপানি পক্ষ এ সময় বাংলাদেশে বিদ্যমান জাপানি বিনিয়োগের পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে। একইসঙ্গে জাপানি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও জানান তারা।
বাংলাদেশ জাপানকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে যে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। এছাড়াও জাপানের বিনিয়োগকারীরা পূর্বে যেসব ক্ষেত্রে কাজ করেছে, সেসব এলাকার অগ্রগতি তুলে ধরে, সে বিষয়ে জাপানকে অবহিত করা হয়। জাপান বাংলাদেশে বাস্তবায়িত কর্মসূচির অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে, ভবিষ্যতেও এই ধারা অপ্রতিহত গতিতে অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকে আলোচনা হয় যে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এ সময় দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে এ ধরনের উন্নয়ন অব্যহত রাখার পাশাপাশি জাপান-বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবগণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক আলোচনায় অংশ নেন। বেসরকারি খাত থেকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও জেবিসিসিআই এর প্রতিনিধিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি, জাপান চেম্বার অব কামার্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন অব জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, জাপানের পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিগণ এবং জাইকা ও জেইটিআরও’র বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধানগণ এ সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (এক্সিকিউটিভ সেও ও প্রাইভেট ইপিজেড) যথাক্রমে ব্যবসা ও লজিস্টিক খাতে সরকার কর্তৃপ্রদত্ত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এসিআই লিমিটেডের কৃষি ব্যবসা বিভাগের সভাপতি ড. এম এইচ আনসার ও পরিসি এক্সচেঞ্চ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ যথাক্রমে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবসা ও লজিস্টিক খাতে জাপানি বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ ও সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দেশদু’টির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করার মাধ্যমে উভয় পক্ষ পঞ্চম জাপান-বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট সংলাপ শেষ করে।বাসস