বাংলাদেশে প্রতি মাসে খাদ্যপণ্যের দাম ৫ শতাংশের বেশি থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। টানা তিন বছর খাদ্যপণ্যের দাম একই হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও দীর্ঘ সময় ধরে ৯ শতাংশে রয়েছে।
তবে অন্যান্য দেশেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেশির ভাগ দেশেই দাম ওঠানামা করেছে। অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলংকায় পণ্যের দাম স্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে এখন আবার নিম্নমুখী হয়েছে। ফলে ওইসব দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে টানা খাদ্যপণ্যের দাম একই হারে বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি বাড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্য ও মূল্যস্ফীতির হারের চিত্র তুলে ধরা হয়। এই প্রতিবেদনটি প্রতি মাসে প্রকাশ করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চারটি ক্যাটাগরি করেছে। এর মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে- ২ শতাংশের কম বৃদ্ধি। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে- ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে- ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি। চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে- ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি। যাকে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ধরা হয়।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এ বছরের গত নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন বছর ধরে খাদ্যপণ্যের মূল্য প্রতি মাসেই বেড়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৫ শতাংশের বেশি থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু অনেক দেশেই পণ্যের দাম বেড়েছে, আবার কমেছে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ওঠানামা করেছে।
বিষয়টি স্বীকার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সরকার বাজার ব্যবস্থাপনাকে এমনভাবে নষ্ট করে গেছে যে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উপকরণই কাজ করছে না। দাম কমাতে এত শুল্কছাড় দেওয়া হলো তাতেও বাজারে প্রভাব পড়ছে না। এদিকে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওঠানামা করেছে। কখনোই একই রেখায় বাড়েনি। যেমনটি বাংলাদেশে হয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ।ডিসেম্বরে বৃদ্ধির হার কমেছে। ওই মাসে বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের দাম আবার বেশি মাত্রায় বেড়েছে। ওই সময়ে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। একই বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির হার আবার কমে গেছে। ওই সময়ে বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশ। একই বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধির হার আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশে। যে কারণে দেশটিতে (বাংলাদেশ) খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে।
এছাড়া সার্কভুক্ত দেশ নেপালে ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছিল ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বৃদ্ধির হার কমে যায়। ওই মাসে বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশ্যের মধ্যে। একই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধির হার আবার বেড়ে যায়। ওই সময়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়েনি, স্থিতিশীল ছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা আবার বৃদ্ধি পায়। ওই সময়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। একই বছরের জুলাইয়ে আবার বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ২ থেকে ৫ শতাংশ। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার আবার বেড়ে যায়। ওই সময়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভূটানে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ২ থেকে ৫ শতাংশ। একই বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার আবার বেড়ে যায়। ওই সময়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে বৃদ্ধির হার আবার কমে দাঁড়ায় ২ থেকে ৫ শতাংশে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দাম বেড়েছে ২ শতাংশের কম। ওই সময়ে কোনো কোনো মাসে পণ্যের দাম কমেছে। মে ও জুনে আবার পণ্যের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। জুলাইয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আবার বেড়ে যায়। ওই সময়ে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কমে দাঁড়ায় ২ শতাংশের নিচে। ওই সময়ে কোনো কোনো মাসে পণ্যের দাম কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। একই বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আবার কমে ২ থেকে ৫ শতাংশে দাঁড়ায়।
অর্থনৈনৈতিকভাবে দুর্বল দেশ পাকিস্তানে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পণ্যের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। ওই মাসে বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। একই বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কিছুটা কমে ৫ থেকে ৩০ শতাংশে দাঁড়ায়। একই বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও হ্রাস পায়। ওই সময়ে বেড়েছে ২ শতাংশের কম। একই বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। একই বছরের মে থেকে জুলাইয়ে বেড়েছে ২ শতাংশের কম। চলতি বছরের আগস্টে ২ থেকে ৫ শতাংশ ও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর ২ শতাংশের কম বেড়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলংকায় ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে। একই বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে সর্বোচ্চ হারে। ওই সময়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। ওই বছরের এপ্রিল ও মে মাসে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কমে যায়। ওই সময়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। একই বছরের জুনে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরও কমে ২ থেকে ৫ শতাংশে নামে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তা আরও কমে ২ শতাংশের নিচে নামে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আবার কিছুটা বেড়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ ওঠে। ফেব্রুয়ারিতে পণ্যের দাম বাড়েনি, স্থিতিশীল ছিল। মার্চে আবার মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা বেড়ে ৫ থেকে ৩০ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে আবার কমে ২ থেকে ৫ শতাংশে নামে। মে ও জুনে মূল্য বেড়েছে ২ শতাংশের কম। জুলাইয়ে তা আবার বেড়ে যায়। ওই সময়ে বেড়েছে ২ থেকে ৫ শতাংশ। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে ২ শতাংশের কম। ওই সময়ে কোনো কোনো মাসে পণ্যের দাম কমেছে।