মুহাম্মদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার:
“সাংগ্রাই” এর মৈত্রী পানি বর্ষণে মেতেছে বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়। শুক্রবার বিকালে জেলা শহরের সাঙ্গুনদীর চরে পানি বর্ষণে মেতে উঠে তারা। শহরের সাঙ্গু নদীর চরে মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে যোগ দিয়ে বিকাল থেকে দলে দলে মারমা তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। এ সময় চারিদিকে মারমা সঙ্গীতের মূর্ছনা, আর নাচ-গানে আনন্দে মেতে উঠে শিশুসহ সবাই।
এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ- তরুণীরা পানি ছিটানোর মধ্যে দিয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণে মেতে উঠে। এই মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে বিদেশীরাও অংশগ্রহন করে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি,পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রু মার্মা, সদস্য লক্ষীপদ দাশ,সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট এর সাংস্কৃতিক বিষয়ক কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক কবি সিং ইয়ং ম্রো, বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট এর পরিচালক মং হ্নৈ চিং, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ, প্রাক্তন সহকারি শিক্ষক দিপ্তী কুমার বড়ুয়া, উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি থেওয়াং, সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই,১নং রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যঅংপ্রু মারমা,৬নং জামছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যসিং শৈ মারমা,২নং কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান মংপু মারমা, ৩নং বান্দরবান সদর ইউপি চেয়ারম্যান অংসাহ্লা মারমা, ৪নং সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উক্যানু মারমা’সহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও আদিবাসী নেতারা।
এসময় হাজার হাজার পাহাড়ী-বাঙালী মৈত্রী পানি বর্ষণে উপভোগ করে। তাছাড়া তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন এর আয়োজন করা হয় সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে। সন্ধ্যায় একই স্থানে মারমা আদিবাসীদের বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী গান পরিবেশন করে উৎসব অঙ্গনকে মাতিয়ে রাখে। এবার সাংগ্রাই এর জন্য ভিন্নধর্মী গান রচনা করে আলোচনায় আসেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর চলে আদিবাসীদের ঘরে ঘরে ভিন্নধর্মী পিঠা-পুলি তৈরীর কাজ। পাড়ায় পাড়ায় পেন্ডেল সাজিয়ে তারা একে অন্যেও বাসায় গিয়ে পিঠা তৈরী করে।
পুরাতন বছরকে পেছনে ফেলে আসে নতুন বছর, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাহাড়ের আদিবাসী পল্ল-ীর মারমা আদিবাসীরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে মৈত্রী পানি বর্ষণসহ সাংগ্রাই উৎসবকে কেন্দ্র করে। পাহাড়ের আদিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণের এই উৎসব পালন করে থাকে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে বৈসাবি হলেও বান্দরবানের মারমারা বর্ষবরণের এই উৎসবকে সাংগ্রাই বলে থাকে। এই উৎসব দেখতে প্রতিবছরের মতো এবারও বান্দরবানে দেশি বিদেশী পর্যটকদের ভীর পরিলক্ষিত হয়। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসব ২দিন হলেও এবার সাংগ্রাইয়ে অনুষ্ঠানসূচী সংক্ষিপ্ত করা হয়। বান্দরবান জেলা শহরে শুক্রবার মধ্যরাতে এই উৎসবের ইতি টানা হলেও, জেলার উপজেলাগুলোতে ১৭ এপ্রিল শেষ হবে মারমাদের বর্ষবরণের সাংগ্রাই অনুষ্ঠান।