সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের (১৯৭১) ভাষণের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য নিয়ে জার্মানির বার্লিনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চ স্থানীয় সময় বিকাল ৫-৭টা পর্যন্ত ভার্চুয়ালি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শাহেদ আকতার এবং জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন অধ্যাপক পিটার সিনঙ্গেল।
জার্মানি, চেক রিপাবলিক এবং কসোভোতে বসবাসরত প্রবাসী বিভিন্ন পেশাজীবী বাংলাদেশি, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ ৩০ জন সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণটির ব্যাপ্তি ১৮ মিনিটের কিছু বেশি সময়ের হলেও এর মধ্যে বিগত দিনে বাংলার মানুষের প্রতি পাকিস্থান সরকারের বৈষম্য, শোষণ ও বাঙ্গালির আত্ননিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য আন্দোলনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্রের মুখে বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মূলত বঙ্গবন্ধু তার এই ভাষণের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণটি শুধু দেশের মধ্যে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, এ ভাষণটিকে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো “ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ তার বক্তব্যে ব্রিটিশ শাসন হতে ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ কর্তৃক ২০১৩ সালে Jacob F. Field প্রকাশিত ২৫০০ বছরের বিশ্বসেরা যুদ্ধকালীন ভাষণের সংকলন ‘We Shall Fight on the Beaches: The Speeches That Inspired History”-এ ৭ই মার্চের ভাষণটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি জাতির জনকের অতুলনীয় দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধ এবং অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলীতে অনুপ্রাণিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালনের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গত ১২ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন অধ্যাপক পিটার সিঙ্গেল।
তিনি আরও জানান, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী এনজিওদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রতি তার অতিউচ্চ ধারণা তৈরি করেছে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শাহেদ আকতার তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রবাসীদের অনুপ্রাণিত করেছিল সেটি তুলে ধরে সেই সময়ের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করেন।
ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্টদূত ৭ই মার্চ উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী এবং দূতাবাসের মিনিস্টার জনাব মুর্শিদুল হক খাঁন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বাণী পড়ে শোনান।
সভায় উপস্থিত জার্মানি, চেক রিপাবলিক ও কসোভো থেকে অংশগ্রহণকারী বাঙালি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ কর্মীবৃন্দ সংক্ষিপ্তভাবে বক্তব্য প্রদান করেন এবং ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্যসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন।