২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়। বিএনপি গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে কাজটি রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে করেছে, এরপর তাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকারই থাকে না।’
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বেগম আইভি রহমান মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘একাত্তরে গোলাম আজমের নেতৃত্বে গণহত্যা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবন বানিয়ে বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। ২১ আগস্ট তার মধ্যে অন্যতম। গোলাম আজমের গণহত্যা আর তারেক জিয়ার গণহত্যা একই। একাত্তরে গণহত্যার কারণে জামায়াত দেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এরপর বিএনপিরও এদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার থাকার কথা নয়।’
দেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘যে দল রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাদের নিশ্চিহ্ন করতে গ্রেনেড হামলা ঘটাতে পারে তাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার থাকতে পারে কি? ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় থাকতে চায়, ক্ষমতা দখল করতে চায় তাদেরকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করে যত দ্রুত একঘরে করে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।’
হানিফ বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে কলঙ্কময় দিন ২১ আগস্ট। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী দলের সমাবেশে হামলা চালানোর পর মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির অনেকেই সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন। অবাক হয়ে যেতে হয়। অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হামলা দ্বিতীয়টি হয়েছে বলে জানা নেই। এই ঘৃণ্য ইতিহাস শত শত বছর ধরে লেখা থাকবে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে সেদিন গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছি। হাসপাতালে গিয়ে যখন টেবিলের ওপর আইভি রহমানকে দেখলাম জীবিত না মৃত বুঝা যাচ্ছিল না। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ছিলেন। দুই পা নেই। কী বিভৎস, মর্মান্তিক দৃশ্য।’
গ্রেনেড হামলা কারা করেছিল? কীভাবে ঘটিয়েছিল? এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। হাওয়া ভবন বানিয়ে সীমাহীন দুর্নীতি করায় মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তারা বুঝেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে আর কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না। তাহলে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবে।’
২০০৪ সালে বিএনপি শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘তাদের গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে বিএনপি সহযোগিতা করেছিল- এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেকের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছিল। তার প্রমাণ তারা রেখে গেছে। হামলার পর পুলিশ টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সরিয়ে খুনিদের নির্বিঘ্নে পালাতে সহায়তা করেছিল। হতাহতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না করে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটিয়ে মামলার আলামত ধ্বংস করে দিয়েছিল।’
হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম জলিল সাহেব, সাবের হোসেন থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে তাদেরকে ঘুরানো হলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে মামলা নেওয়া হলো না। বলা হলো উপরের নির্দেশে নিতে পারছি না। তারা যদি জড়িত না থাকবে, তাহলে তারা কেন এই কাজ করেছে?’
আওয়ামী নেতা বলেন, ‘সংসদের নিয়মানুযায়ী সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা যখনই বক্তব্য দিতে চাইবেন, দিতে পারেন। কিন্তু গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে চাইলে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া বললেন, শেখ হাসিনাকে কে মারতে যাবে, সে নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছে। কী নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা পরায়ন তামাশা।’
এই রাজনীতিক আরও বলেন, ‘হামলার পর বিএনপি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে মামলা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে খুনিদের সাক্ষীতে প্রমাণ হয়েছে লুটেরা তারেক হাওয়া ভবনে বসে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও জঙ্গিদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছে কিভাবে হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালম পিন্টু, জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদ, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর মিলে দফায় বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা করেছে। হামলার জন্য পাকিস্তান থেকে আর্জেস গ্রেনেড আনা হয়েছে।’
তারেক রহমানের ন্যূনতম মানবিকতা, রাজনীতির শিষ্টাচার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি তারেক রহমান বললেন, গ্রেনেড হামলার জন্য নাকি শেখ হাসিনা দায়ী। তার প্রশ্ন মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল, দেড় ঘণ্টা আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কিভাবে গেল। তারেক এসব কোথায় পেল। দুর্নীতিবাজ তারেকের মিথ্যাচার সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। জনসভা কোথায় ছিল সেদিনের পোস্টারে লেখা আছে। ২১ তারিখ সকালে প্রথম সারির পত্রিকায়ও ছাপা আছে। এর পরও কিভাবে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে।’
বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, ‘বিএনপিতে অনেকে শিক্ষক, উচ্চশিক্ষিত আছেন। মির্জা ফখরুল সাহেবও শিক্ষক ছিলেন। একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ হয়ে তিনি কিভাবে মিথ্যাচার করেন বোধগম্য হয় না।’
এসময় তিনি ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। প্রধান আলোচক ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম। সভাপতিত্ব করেন লায়ন মশিউর আহমেদ।