মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও দেশিটির বিদ্রোহীদের মধ্যে চলা সংঘাতের কারণে আবারও বাংলাদেশে ঢুকে পড়া দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৭৭ সদস্যকে আগের মতো আলোচনা করে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার হাজনা মো. হাসিম। এরপর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ৩৩০ বিজিপি সদস্যকে জাহাজে করে দুই দফায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিজিপি সদস্যদের পাশাপাশি কয়েকজন সাধারণ নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল, তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে।
মিয়ানমারের সেনাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে না পারা সক্ষমতা বা অক্ষমতার বিষয় না উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, এর আগে তারা ভারতেও প্রবেশ করেছিল। তাদেরকে ফেরতও নেয়া হয়েছিল। সীমান্ত খোলা, তারা যখন প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে তখন উপায় না পেয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর বাইরে কিছু নয়।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা এমডি হাশিম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এবিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, মালয়েশিয়াতে আমাদের শ্রমবাজার ও শ্রমিকদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ইকোনোমিক জোনগুলোতে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে।
সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা এমডি হাশিম। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ বেকার অবস্থায় রয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এ বিষয়কে অনেক গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। সমাধানের পথ খুঁজছে।
এদিকে মিয়ানমারে আরকান বিদ্রোহীদের ধাওয়া খেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিজিপির ১৭৭ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ির বিজিবির স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পালিয়ে আসা ২ দোভাষীকে পুশব্যাক করা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৭৭ জন সদস্যসহ ২ জন দোভাষী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আশারতলী সীমান্ত দিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এসব বিজিপি সদস্যদেরকে নিরস্ত্র করে রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। আশ্রয় নেয়া বিজিপির সদস্যদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত হয়েছেন। তাদের বিজিবির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ৪৬ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকার জামছড়ি দিয়ে সকালে ২৯ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করে। তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছিল। পরে রাতে নতুন করে আরও ১৫০ জন সদস্য প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত রয়েছেন। সোমবার (১১ মার্চ) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তাদের পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ চলছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তাদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দুই দফায় প্রবেশ করে বিজিপির ১৭৭ সদস্য।