নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে শুনানি করে মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এদিন সকালে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুপুর ২টার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন উপদেষ্টা।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষ্যে এক সাংবাদিক ধন্যবাদ জানিয়ে কথা বলতে শুরু করলে তাকে থামিয়ে দিয়ে গণমাধ্যমের মৃদু সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা এতদিন ব্যক্তিগতভাবে দুর্বৃত্তদের মহামানব বানাইছেন। আর মহামানব লোকদেরকে দুর্বৃত্ত বানাইছেন। এটা কিন্তু করবেন না। আপনারাও জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবেন, আমরাও জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করব। আমাদেরকে স্তুতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনারা তো দেখেছেন বিপদে পড়েছে কীভাবে। কথার আগে একবার স্যার পরে একবার স্যার, এক বাক্যের মধ্যে চার-পাঁচবার স্যার এসব আর চলবে না। এটা আমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও বলে দিয়েছি।
ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে এই সরকার এসেছে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, বর্তমান সরকার কাজই জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ আমাদের মূল লক্ষ্য হবে ব্যয় সংকোচন। জনস্বার্থ ও জনপ্রত্যাশা রক্ষা করাই হবে আমাদের মূল কাজ।
বারবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না, যা দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। আমরা বাধ্য না হলে মূল্যবৃদ্ধি করব না। প্রয়োজন হলে কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলে নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেবে।
বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির বিশেষ আইনের অধীন চলমান সব কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, তবে দায়মুক্তির বিধান নামে পরিচিত এই বিশেষ আইনে ইতিমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলো বহাল থাকবে এবং চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ, যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে, তাই চাইলে তা বাতিল করা যাবে না। এ জন্য আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে হবে।
বিতর্কিত আইনটি বাতিল করার বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক, তাতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকবে।
বিশেষ আইনে চুক্তির ট্যারিফ নিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, আগের সরকারের সবকিছু বাতিল করতে হবে, এমন নয়। যেসব কাজ ভালো, তা বহাল থাকবে। যেসব প্রকল্প অপ্রয়োজনীয়, সেগুলো বাদ যাবে। কারণ, সরকারে ধারাবাহিকতা তো বজায় রাখতে হবে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে ফাওজুল কবির বলেন, সবাইকে তো ঢালাওভাবে বাদ দেয়া যাবে না। কাজের জন্য লোক লাগবে। কেউ আগে অনিয়ম করলে তাকে একটা সুযোগ দিতে হবে। আমি কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি, আগের মতো নিজেদের মন মতো কাজ করবেন, তেমন হবে না। এখন ভাবতে হবে, কোন কাজটি করলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে, সেভাবে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গ্যাস-সংকটের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, সামিটের টার্মিনালটি চালুর বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় জানতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।