করোনায় ব্যাংকঋণ আদায়ে বিশেষ ছাড় চলতি বছরের শুরুতে তুলে নেওয়ায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ৮ ব্যাংক।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। এটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী, বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ৮ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। ৩ হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
আর বেসরকারি খাতের ৪টি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৮ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ১৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত। ব্যাংক খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।