বিশ্বকাপ মানেই উপমহাদেশ যেন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দুই পক্ষই একত্রিত হয় ল্যাটিন আমেরিকায় গিয়ে। এক পক্ষ দেয় ব্রাজিলকে সমর্থন, অন্য পক্ষ আবার আর্জেন্টনাকে। হালের সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে টঙ দোকানের চায়ের আড্ডায়, ক্লাসের অবসরে স্যার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দুই দলের সমর্থকদের তর্ক যুদ্ধ পৌছায় চরমে। এই উপত্যকায় ফুটবলের উন্মাদনা এমনই।
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে পাড়ায় পাড়ায় পছন্দের দলের পতাকা বানানো সময়টা যেন এক উৎসব। নিজেদের নাম দেওয়া সেই পতাকা টানানো শেষে যে আনন্দের ছড়াছড়ি তা বিশ্বকাপ ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। বিশ্বকাপ ফুটবল সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসে। মজার বিষয় এবারের ফুটবল বিশ্বকাপটিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে আয়োজিত হলেও গরমের দেশ বলে এবার সেটি হচ্ছে ডিসেম্বরে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্রাজিল অন্যতম ফেভারিট একটি দল। এদেশের ফুটবল ভক্তদের বড় একটা অংশের সমর্থনই পায় ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এবার একটি শক্তিশালি দল নিয়েই কাতারে দেখা যেতে পারে ব্রাজিলকে। দলটির তারকা খেলোয়াড় নেইমার জুনিয়রের হাতে এখনও অবধি কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা নেই। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের সুযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি। তাছাড়া গত ২০ বছর ধরে বিশ্বকাপ জিততে পারে না ব্রাজিল। নেইমারের সামনে তাই সুযোগ দুই আক্ষেপ ঘোচানোর।
প্রতিটি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিখুঁত একটি দল নিয়ে খেলেছে। সেখানে তারা ১৭ ম্যাচ খেলে ১৪টি ম্যাচ জিতেছে তারা। মাত্র তিনটি ম্যাচে তাদেরকে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে। তবে হারতে হয়নি একটিতেও। প্রতিটি ম্যাচেই তাদের সেরা আক্রমণভাগ ও রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলতে দেখা গেছে। সুফলও পেয়েছে তারা। প্রতিপক্ষের জালে ৪০ বার বল জড়ালেও গোল হজম করতে হয়েছে মাত্র ৫ বার।
বিশ্বকাপে যেমন হতে পারে ব্রাজিলের সেরা একাদশ
ফিফা বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলের সেরা একাদশ কেমন হবে? ফরম্যাশনই বা কেমন হবে তা নিয়ে ব্রাজিল ভক্তদের আগ্রহের কমতি নেই। ৪-৩-৩ ফরম্যাশনেই কাতার বিশ্বকাপে দেখা যেতে পারে ব্রাজিলকে।
গোলরক্ষক
শুরুতেই আসা যাক গোলরক্ষকের আলোচনায়। এবারের কাতার বিশ্বকাপের অ্যালিসন বেকারকে ব্রাজিলের গোলরক্ষক হিসেবে দেখার সম্ভবনা বেশি। বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে তিনিই ছিলেন ব্রাজিলের অতন্দ্র প্রহরী। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা মাত্র পাঁচ বার তাকে পরাস্ত করে গোল করতে পেরেছিলেন। এছাড়া ম্যানচেস্টার সিটির এডারনেরও স্কোয়াডে থাকার সম্ভাবনা আছে। গোলরক্ষক হিসেবে তিনি পছন্দের তালিকায় থাকার সম্ভবনা রয়েছে। তবে লিভারপুলের এডারসনকেই আজকাল সেরা বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
ডিফেন্ডার
ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা টপ ক্লাস প্লেয়ার। অ্যালেক্স টেলস ও দানি আলভেস উভয়কেই এই ভূমিকায় মাঠে দেখা যেতে পারে। তবে তাদের বাইরেও এই জায়গায় ব্রাজিলের অনেক বিকল্প খেলোয়াড় আছে। মারকুইনহোস ও মিলিতাও ইদানিং দুর্দান্ত সময় পার করছেন। যদিও থিয়াগো সিলভার অভিজ্ঞতা সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে।
মিডফিল্ডার
মিডফিল্ডের ক্ষেত্রে সবার আগে আসে কাসেমিরোর নাম। এই নাম এখন ফুটবল দুনিয়াতেও আলোচিত। দারুণ ছন্দে থাকা মাঝমাঠের এই খেলোয়াড় রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমিয়েছেন। ব্রাজিলের মিডফিল্ডে তিন সদস্যের ফর্মেশন রিয়াল মাদ্রিদের লুকাস পাকেতা ও ফ্রেডের সঙ্গ দিতে পারেন কাসেমিরোকে। কারণ কোয়ালিফায়ারের সময় ব্রাজিলের কোচ তিতে এই জায়গায় তাদেরকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছিলেন। তাদের পিছনে, ব্রুনো গুইমারেস এবং ফ্যাবিনহোকেও দেখা যেতে পারে।
ফরোয়ার্ড
ফরোয়ার্ডের কথা বললে প্রথমেই আসবে নেইমারের নাম। খুব সম্ভবত কাতারেই ব্রাজিলের হয়ে শেষ নৃত্যটা দেখাবেন তিনি। কারণ পিএসজির এ স্ট্রাইকার আগেই জানিয়েছিলেন, এটিই হবে তার শেষ বিশ্বকাপ। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব উজার করে দিয়েই হয়তো খেলবেন নেইমার। তাছড়া ব্রাজিল দলটা এই মুহূর্তে নেইমার ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। তিনি ছাড়াও ভিনি ও রদ্রিগো ও থাকতে পারেন। রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন অধিনায়ক মার্সেলো ও ইডার মিলিতাও আছেন। তবে ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।