মো: আহসানুল ইসলাম আমিন, স্টাফ রিপোর্টা:
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী এবং লৌহজং উপজেলা পদ্মার চরে বসবাসকারী মানুষগুলো সারাবছর কোন ধরনের নিরাপত্তা ছাড়া উত্তাল পদ্মা নদী ট্রলারযোগে পাড়ি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রী সাধারণ। তারা জানান, বৈশাখ মাসের শুরু থেকে পদ্মা নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। এসময় কাল বৈশাখী ঝড়সহ বাতাস, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্ঠিসহ কালবৈশাখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় প্রতিদিনই। এছাড়ও বর্ষার এই সময়টাতে নদী পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেড়ে যায় স্রোতের তীব্রতা। মাঝে মধ্যে বৈরি আবহাওয়া এবং ঝড় বৃষ্টির কারনে পদ্মা নদী আরো বেশি উত্তাল হয়ে উঠে। কিন্তু পদ্মা পারাপারে ট্রলারগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। অদক্ষ্য চালকরা অতিরিক্ত যাত্রী আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে ট্রলার চালকরা। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করছেন ট্রলার চালকরা। এতে নদী পথে যাত্রীরা দুর্ঘটনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন যাত্রী সাধারন।
জানাগেছে, উত্তাল পদ্মা নদী জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল- বানারী ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। পদ্মার চরে বসবাসকারী হাজারো সারাবছর ট্রলারযোগে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। এছাড়াও লৌহজং উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো পদ্মার দক্ষিন তীরে অবিস্থিত। সারাবছর পদ্মার চরের বাসিন্দারা ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রলারযোগে পার্শবর্তী ফরিদপুর, শরিয়তপুর, নড়িয়া এবং মাদারিপুর এলাকার লোকজনও পদ্মা পাড়ি দিয়ে লৌহজং, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল- দিঘিরপাড় খেয়া ঘাট হয়ে চলাচল করেন। অনেক সময়ে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও দক্ষিন বঙ্গের হাজারো যাত্রী এই পথে যাতায়াত করেন। শুকনো মৌসুমে ভোগান্তি কম হলেও নদীতে পানি এবং স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে যাত্রীদের মনে ভয় আর আতঙ্ক বেড়ে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন রকম যাত্রী সুরক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ট্রলারযোগে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন লাখো মানুষ।
যাত্রীদের অভিযোগ, বৈশাখীর মাসের আগ মুহুর্তে এখনই পদ্মা নদী উত্তাল হতে শুরু করেছে। গেলো বর্ষার সময়ে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ট্রলারে যাত্রী সাধারণ পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছিলো। সামনে আসতে পারে কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখ মাস যতো এগিয়ে আসছে যাত্রীদের মতো বাড়ছে ভয় -আতঙ্ক। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন রকম যাত্রী সুরক্ষা ছাড়াই ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছেন হাজারো মানুষ। যাত্রীরা আরো জানান, ট্রলারে অদক্ষ চালক, অসতর্কতা, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও ঝুঁকিপূর্ন ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে চলছে নিয়মিত যাতায়াত । ভয় আর আতঙ্ক থাকা সত্বেও কোন উপায়ন্ত না পেয়ে যাত্রীরা ট্ররারযোগে পদ্মা নদী পারাপারে বাধ্য হচ্ছে। ট্রলারগুলোতে চালকরা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রাখছেনা কোন লাইফ জ্যাকেট কিংবা সুরক্ষা সামগ্রী। যা দুর্ঘটনার সময়ে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল বাজার, লৌহজং উপজেলার কলমা, লৌহজং থানা এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীবাড়ী ট্রলার দিয়ে পদ্মা নদীর দক্ষিন তীরে মানুষ যাতায়াত করছেন। পাশাপাশি পার্শবর্তী জেলাগুলো থেকেও লোকজন পদ্মা পাড়ি দিয়ে টঙ্গীবাড়ী এবং লৌহজং উপজেলায় আসা যাওয়া করছেন ট্রলারে। যাত্রীদের কারো গায়ে নেই কোন লাইফ জ্যাকেট। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই মানুষ ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছেন। স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে নদীর ওপারে আসা যাওয়া করতে বেগ পেতে হচ্ছে ট্রলার চালকদেরকে। ট্রলার চালকরা জানান, সারাবছর তারা এভাবেই যাত্রী পারাপার করে থাকেন। ট্রলারে নিরাপত্তা সামগ্রীর রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকার কারনে চালকরা নিরাপত্তা সামগ্রী ট্রলারে রাখছেনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এব্যাপারে তাদেরকে কিছু বলা হচ্ছেনা বলেও জানিয়েছেন একাধিক ট্রলার চালক।
ট্রলারযাত্রী খোরশেদ আলম সিকদার জানান, নদীতে স্রোত আর ঝড় বৃষ্টির সময়ে পদ্মা পারাপারে আতঙ্কে থাকতে হয়। এখন চলে আসছে কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুম। ট্রলারগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কোন সরঞ্জাম নেই। যাত্রীদেরকে লাইফ জ্যাকেট থাকলে ভালো হতো। তিনি আরো জানান, পদ্মা নদীতে ট্রলার চলাচলে দূর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদেরকে সতর্কতার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলু রায় বলেন, নদী পথে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ট্রলার চালকরা যেন যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শতভাগ নিরাপত্তা সামগ্রী রাখেন । এ বিষয়ে চালকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ট্রলারগুলোতে যেন যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ট্রলার চালকরা এ বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হচ্ছে।