ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখল ব্রিটেন। আজ মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই প্রথমবারের মতো দেশটিতে তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দর এলাকায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার ব্রিটেনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের ইতিহাসে তাপমাত্রা কখনো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে বলে রেকর্ডে নেই। ব্রিটেনে এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি যা হয়েছিল ২০১৯ সালে কেমব্রিজে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন কোম্পানিগুলো অনেক ট্রেন সার্ভিস বাতিল করেছে এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স তৈরি রেখেছে।
ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে, এতে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে গেছে। আর পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সের শুষ্ক গ্রামীণ এলাকাগুলোতে দাবানল আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
সোমবার ও মঙ্গলবারের তামপাত্রা ২০১৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক গার্ডেনে রেকডকৃত ৩৮ দশমিক ৭ সেলসিয়াসকে ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণে ব্রিটেনজুড়ে সরকার ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে।
সোমবারই সরকারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী কিট মল্টহাউস বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি কঠিন ৪৮ ঘণ্টা আসছে’।
লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নেটওয়ার্ক সোমবার ও মঙ্গলবারের জন্য তাদের নেটওয়ার্কে সাময়িকভাবে দ্রুততার গতিসীমা বেঁধে দিয়েছে। যাত্রীদের শুধু জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
দেশটির জাতীয় রেল নেটওয়ার্ক যাত্রীদের বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানায়, মঙ্গলবারের কিছু সময়জুড়ে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ইংল্যান্ড ও লন্ডনের মধ্যকার প্রধান একটি রুটসহ কয়েকটি রুটে সার্ভিস বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা ইউকেএইচএসএ সোমবার ইংল্যান্ডের তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্য সতর্কতা লেভেল ফোর এ উন্নিত করেছে।
ব্রিটেনের আবহাওয়া দপ্তর লেভেল ফোর সতর্কতাকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। তাপ প্রবাহ ‘অত্যন্ত তীব্র ও প্রলম্বিত হওয়া এর প্রভাব স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা ব্যবস্থাকে’ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে এই সতর্কতা জারি করা হয় বলে জানিয়েছে তারা। এই লেভেলে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজনই শুধু না সুস্থ-সবলরাও অসুস্থ হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।
শুধু যুক্তরাজ্য নয় পুরো ইউরোপই পুড়ছে। স্পেনে কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ওপর উঠছে, পর্তুগালে পারদ উঠেছে ৪৭ ডিগ্রি পর্যন্ত। পশ্চিম ফ্রান্সের বিস্তীর্ণ এলাকা, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি সহ আরও অনেক দেশে দাবানলের আগুনে হাজার হাজার হেক্টর জমি ও বাড়িঘর পুড়ে গেছে, সব মিলিয়ে ৫০ হাজারেরও বেশি লোককে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে। স্পেনে অন্তত ২০টি দাবানল নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় আছে। উত্তর দিকে পর্তুগাল সীমান্তের কাছাকাছি পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন ইউরোপ ও ব্রিটেনের বিশাল অংশ জুড়ে এখন খরা পরিস্থিতি চলছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব দেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে, লোকজনকে এমনকি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতেও বারণ করা হচ্ছে।
এদিকে, ফ্রান্সের পশ্চিমাঞ্চলে জারি করা হয়েছে ‘হিট অ্যাপোক্যালিপস’ সতর্কতা। এছাড়া ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমের ১৫টি অঞ্চলে তাপমাত্রা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউরোপের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদাহ এখন মহাদেশটির উত্তরাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে বেলজিয়াম ও জার্মানি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখতে পারে।
ফ্রান্সের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দেশটির বেশ কয়েকটি অংশ তাদের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনগুলো পার করছে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নঁতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।