মুহাম্মদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার:
বড় দিনর ছুটিসহ যুক্ত হয়ে টানা ছুটিতে ভ্রমন প্রেমীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন নগরী বান্দরবান। জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থানে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ দিন পর আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটায় খুশি হোটেল মোটেল রিসোর্টের মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবানে। আর তাদের নিরাপত্তায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন বান্দরবান হোটেল-মোটেল ব্যাবসায়ীরা। ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বরের সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটিতে অগ্রিম হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছেন পর্যটকরা। ফলে বান্দরবানের অধিকাংশ হোটেলের সব কক্ষ বুকড হয়ে গেছে।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক। তবে গত ১৭ অক্টোবর থেকে পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞার কারনে এবছর শীত মৌসুমে তেমন একটা পর্যটকের আগমন না ঘটলেও সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষ্যে টানা ৩ দিনের ছুটি থাকায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বান্দরবানে। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ভুলে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পর্যটকরা চাঁদের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। জেলার মেঘলা নীলাচল প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত ,রেমাক্রি, নাফাখুম, তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থান এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে। কেউ বা ছুটে যাচ্ছে ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখতে, আবার কেউবা ছুটে যাচ্ছে সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বান্দরবানে আসা পর্যটরা বলেন, পরীক্ষা শেষে নিরিবিলি প্রকৃতির সঙ্গে সময় পার করতে বান্দরবান চলে আসছি আমরা।
হোটেল ব্যাবসায়ীরা জানান, সারাবছর পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তা কয়েকগুণ বাড়ে। কিন্তু চলতি বছরে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের অধিকাংশ সময় পার হয়ে গেলেও তেমন পর্যটকের সাড়া ছিল না। তবে সাপ্তাহিক ও বড়দিনের ছুটি মিলে এই তিনদিনের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে শুক্রবারের জন্য অধিকাংশ হোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া আগামী ২৪ ডিসেম্বর ৮০ শতাংশ ও ২৩ ডিসেম্বর প্রায় ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বরাদ্ধ নিয়ে রেখেছেন ভ্রমণ প্রত্যাশীরা।
অন্যদিকে পর্যটন কেন্দ্র নিলাচল ও মেঘলা দেখা গেছে, হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ মেঘ দেখতে ব্যস্ত। পর্যটন মৌসুমে বিনোদনপ্রেমিদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট।
জেলা শহরের হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার মো. আক্কাস উদ্দীন জানান,শুক্রবার ২৩ডিসেম্বর হোটেলের সব কক্ষই অগ্রিম বরাদ্ধ নিয়ে রেখেছে পর্যটকরা। এছাড়া টানা এই তিনদিনের ছুটিতে ২৪ ডিসেম্বর ৮০ শতাংশ ২৩ ডিসেম্বর ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে।
হোটেল অরণ্য এর মালিক জসিম উদ্দীন বলেন, ডিসেম্বরে আমাদের পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি। শুক্রবার থেকে যে টানা ছুটি ছিল সেটাতে আমাদের হোটেলে বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।
হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারী মো. জাফর উল্লাহ বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে পর্যটকের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, হোটেলে কোন সিট খালি নেই।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সুপার নকিবুল ইসলাম বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের একাধিকও টিমও কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই সজাগ আছি। জেলায় পর্যটকদের সেবায় রয়েছে শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস এছাড়াও পর্যটক পরিবহণে রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ী, ২ শতাধিক নৌ যান, সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার ২৫ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট।