আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর… এ ভারত মহাসাগরে আমাদের বঙ্গোপসাগর। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এ জায়গা দিয়ে সকল ব্যবসা—বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারও সঙ্গে কোন দ্বন্ধ নাই। সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক যোগাযোগ পথ, এ জলপথ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন হয়। আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করতে পারে তারা। এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু এদের নানা ধরনের তালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ। স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আসলে তাদের ক্ষমতায় বসানো না, এখানে একটা কথা আমি সবাইকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে রাখি এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন না, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না, এরা একটা জিনিসই করতে চায়। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সমাজিক উন্নীতি হচ্ছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্রের হার ১৮ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হত দরিদ্র ৫ দশমিক ৭ নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এলাকাটাকে নিয়ে নানাভাবে খেলার চক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে সংঘাত ছিল। আমি সরকারে (১৯৯৬) আসার পরে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা। যেহেতু এটা আমি জানি, বুঝি। কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে এবং তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে। তাদেরকে বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু আতেল আছে। জানি না তারা এসব চিন্তা করে কী না। এগুলো কখনো উপলব্ধি করে কিনা? সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মিলাই, দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এ কাজগুলো করে বেড়ায়। এ বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ..আমি বলবো ভারত মহাসাগরসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো যথেষ্ট সচেতন আছে। এটা আমি বিশ্বাস করি। সরকারপ্রধান দেশপ্রেমী নাগরিকদের এ ব্যপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি করি না। তাহলে ২০০১ সালে যখন আমার কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব এসেছিল… খালি মুখেই বলতাম আমি গ্যাস বিক্রি করব, তাহলে ক্ষতায় আসার কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বার্থ বেঁচে, দেশের মানুষের সম্পদ অন্য কোন দেশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে এরকম ক্ষমতা লোভী আমি না, আমার বাবাও ছিলেন না, আমিও না। দেশের সম্পদে মানুষের অধিকার। এই সম্পদ মানুষের অধিকার সেটাই করে যাচ্ছি। আজকে যখন দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি তখনই সকলের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে বেশি অবাক লাগে যেসব দেশ আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, তারা যেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতালা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে এ দেশের মানুষের উপর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার করলো, খুনসহ নানান অপকর্ম করেছিল তা নিয়েতো কোন কথা বলেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারার কথা ছিল না, আমাদের হারানো হয়েছিল। খালেদা জিয়া যখন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটরবিহীন নির্বাচন করেছিল তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়েতো কোন কথা বলেনি। সেটা নিয়ে এদের কোন উদ্বেগ আমরা দেখি নাই।
তিনি বলেন, হঠাৎ এবারের নির্বাচনের সময় দেশটি যেন খুব বেশি উতালা হয়ে পড়লো। আর নির্বাচনের দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায়, কী, কিভাবে হবে তাই নিয়ে সব থেকে বেশি.. এবং একের এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কি? বিএনপি এখন তাদের চোখের মনি, যারা এত মানুষ হত্যা করেছে। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। যে বিএনপি কয়দিন আগে আগুন দিয়েছে, সন্ত্রাস ও মানুষ খুন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছুদিন আগে পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ। পুলিশের উপর আক্রমণ। পুলিশ কি বসে, বসে মার খাবে? জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা, এই দেশে একটার পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালালো, আজকে তাদের (বিএনপি) নিয়ে মাতামাতি, তাদের নিয়ে বসতে হবে, কথা বলতে হবে। অনেক বলেছি, জানি খুনি, শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, শুধুমাত্র আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য, অনেক কিছু সহ্য করেছি। করে দেশের জন্য কাজ করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে এত বেশি কথা, যখন আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। আর খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা, সাঈদ মার্কা নির্বাচন কমিশন না। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে যখন তারা (বিএনপি) নির্বাচন করতে চেয়েছিল তখন আমরা এসব চেতনা দেখি নাই। এত কথাও শুনি নাই। আমার মনে হয় বাংলাদেশের উন্নয়নটা তাদের পছন্দ না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পছন্দ না। তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্র কী?
শেখ হাসিনা বলেন, যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। যাদের হাতে আমার বাবা—মা—ভাইয়ের রক্তের দাগ। তাদের জন্য তারা উতালা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের উপর বারবার হামলা করে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গিয়েছে, তাদের আজকে ক্ষমতায় বসাতে হবে!