ভিক্ষা করে গড়া দোতলা স্বপ্নবাড়ি, ২৫ বছরের পরিশ্রমে বাস্তব করলেন রহিম বক্স
পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন সবারই থাকে—ধনী-গরিব সকলের। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। তবে ব্যতিক্রম চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রহিম বক্স ওরফে ‘নমে পাগল’। ভিক্ষা করেই তিনি গড়েছেন এক দোতলা পাকা বাড়ি—তাও আবার সরকারি জমির ওপর। সময় লেগেছে ২৫ বছর।
রহিম বক্সের বাবার নাম মৃত কিয়ামুদ্দিন। বহু বছর আগে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। একমাত্র ছেলের বাবা হলেও ছেলের সংসারে থাকতে রাজি নন তিনি। দিনমজুর পুত্র চাইলেও ভিক্ষুক বাবা নিজের স্বপ্নের ঘরেই কাটাতে চান দিনশেষের রাত।
রহিম বক্স জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কের পাশে সড়ক বিভাগের জমিতে বসবাস করছেন। প্রথমে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে থাকতেন। ঝড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগের পর ২০০০ সালে নিজের হাতেই তৈরি করেন একটি ছোট পাকা ঘর। তখন থেকেই তার স্বপ্ন ছিল ঘরটির ওপর আরেকটি ঘর বানানোর।
সেই থেকে প্রতিদিনের ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ইট, সিমেন্ট, বালু সংগ্রহ করতে থাকেন। দিনের শেষে নিজেই ঘরের কাজ করতেন। এভাবে দীর্ঘ ২৫ বছর পর তিনি গড়ে তুলেছেন একটি দোতলা বাড়ি—নিচতলায় দু’টি ঘর, উপরে একটি কক্ষ। নিচতলার একটি ঘরে তিনি নিজে থাকেন, যার মেঝে ও দেয়ালে টাইলস বসানো; ঘরটিও সাজানো-গোছানো।
উচ্ছেদ অভিযান চালালে সড়ক বিভাগের কর্মীরা তাকে নামাতে পারতেন না। তিনি দোতলায় উঠে বসে থাকতেন। এলাকাবাসীর অনুরোধ ও সহানুভূতির কারণেই বহুবার উচ্ছেদ থেকে বেঁচে যান।
হাউলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন জানান, রহিম বক্স প্রায় ৩০ বছর আগে ঝুপড়ি ঘর তুলে ছিলেন। ২০০০ সালের দিকে শুরু করেন পাকা ঘর নির্মাণ। ধীরে ধীরে নিজ হাতে দোতলা বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি সিঁড়িসহ পুরো নির্মাণকাজ শেষ করে তৃপ্তি নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমে গড়া বাড়ি এখন এলাকাবাসীর কাছে অনুপ্রেরণার গল্প।

 
								                                        





















